সেনা–সমর্থিত সরকারকে যেভাবে বৈধতা দেওয়া হয়েছিল

প্রথম আলো কাজী হাবিবুল আউয়াল প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২৪, ১৪:৩১

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল নিজের কর্মজীবন নিয়ে বিচার ও প্রশাসন: ভেতর থেকে দেখা নামে একটি বই লিখেছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এটি প্রকাশিত হয়েছে। তিনি ১৯৮১ সালে শিক্ষানবিশ মুনসেফ (সহকারী জজ) পদে বিচার বিভাগে যোগ দিয়ে ২০১৭ সালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে অবসরে যান। ২০০৭ সালে যখন সেনা–সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়, তখন তিনি ছিলেন আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। কিছুদিন পরে একই মন্ত্রণালয়ের সচিব হন। তিনি এ বইয়ে সেই সময়ের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন। তাঁর বই থেকে চুম্বক অংশগুলো নিয়ে তিন পর্বের লেখার আজ প্রকাশিত হচ্ছে প্রথম পর্ব।


প্রধান বিচারপতির বয়স বৃদ্ধি


কাজী হাবিবুল আউয়াল পুরোনো এক ঘটনা ধরে বিষয়টির অবতারণা করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘২০০৪ সালের মার্চ মাসে বিএনপি সরকারের আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁকে ডেকে নিয়ে সংবিধানে কিছু সংশোধনী আনার কথা বলেছিলেন। যেমন বিভিন্ন অফিসে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙানো, সংসদে মহিলা সদস্যদের সংরক্ষিত ৪৫টি আসন আরও দশ বছর বৃদ্ধি এবং সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ করাতে স্পিকার অপারগতা জানালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কর্তৃক শপথ পাঠ করানো। মন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ শুরু হয় এবং বিলটির শিরোনাম রাখা হয় সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধন) আইন, ২০০৪।’


এরপর নানা পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর বিলের খসড়া চূড়ান্ত করা হলো। এরপরের ঘটনা ২০০৬ সালের। কাজী হাবিবুল আউয়াল তখন আইন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। তিনি এ নিয়ে লিখেছেন, ‘মাননীয় মন্ত্রী খসড়া বিলটি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিকট গিয়েছিলেন। পরদিন কার্যালয়ে এসেই মন্ত্রী ইন্টারকমে সরাসরি আমাকে জরুরি সালাম দিলেন। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেলাম। বললেন, আউয়াল সাহেব, আরও খানিকটা সংশোধন লাগবে। ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারপতিদের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ করতে হবে। তৎক্ষণাৎ মনে হয়েছিল এর উদ্দেশ্য রাজনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে এটা বুমেরাং হতে পারে।


আমি পদমর্যাদাগত বিভাজনের দূরত্ব ভুলে গিয়ে মাননীয় মন্ত্রীর দিকে মুখ তুলে বললাম, এটা কি ঠিক হবে, স্যার। মওদুদ আহমদ রাশভারী প্রকৃতির ছিলেন। পলিটিক্যাল মাস্টার ও সিভিল সার্ভেন্ট বিভাজনটা বজায় রাখতেন। তিনি বিরক্তভাব ব্যক্ত করে ইংরেজিতে বললেন, যার অর্থ, এটা আপনার কাজ নয়। আপনার কাজ আমরা যা বলব সেটা করা। আমি আমার ভুল বুঝে, সরি স্যার, বলে দ্রুত প্রস্থান করলাম। বুঝলাম আদার বেপারির জাহাজের খবর রাখতে নেই।’


এরপর কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘কিন্তু আমার অনুমান ভুল হয়নি। বিলটি আইনে রূপান্তরিত হওয়ামাত্রই প্রবল প্রতিবাদ ও সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল। ৯৬ অনুচ্ছেদের পরিবর্তন যে মন্দ-উদ্দেশ্যজাত ছিল, তা সহজেই অনুমেয় হয়েছিল। দায়িত্বরত প্রধান বিচারপতি জে আর মোদাচ্ছের হোসেন, আওয়ামীপন্থি বলে অনুমিত, দায়িত্বে বহাল থেকে যাবেন। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান, বিএনপিপন্থি বলে অনুমিত, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবেন। সত্যিই বিষয়টি পরিশেষে বিএনপির জন্য কাল হয়েছিল। অপরিণামদর্শী এমন সিদ্ধান্তের কারণে সেই থেকে আজ অব্দি প্রায় ১৭ বছর বিএনপিকে কাফ্ফারা দিয়ে যেতে হচ্ছে।’


প্রেসিডেন্ট হলেন প্রধান উপদেষ্টা


আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি কে এম হাসান দায়িত্ব নিতে অপারগতা জানালেন। কাজী হাবিবুল আউয়াল এ নিয়ে লিখেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান অনুযায়ী পরবর্তী সম্ভাব্যদের কেউ কেউ গোঁফে তা দিতে থাকলেন। যদি কপাল খুলে যায়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের একজন, সেসময় কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের ডিজি, আমাকে একাধিকবার ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন তাঁর বিষয়ে কোনো আলোচনা হচ্ছে কি না। আইনমন্ত্রী তাঁর সহপাঠী ছিলেন। সরাসরি মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করা হয়তো তিনি সমীচীন মনে করছিলেন না।’

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও