বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার বিকল্প নেই

যুগান্তর ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রকাশিত: ২৬ জুন ২০২৪, ১৩:০৯

এটি কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না যে, একটি দেশের দ্রুত ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ব্যক্তি খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। কারণ, ব্যক্তি খাতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিনিয়োগ ছাড়া ব্যাপকভিত্তিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয় না। দেশের কর্মক্ষম নাগরিকদের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা না গেলে দারিদ্র্যবিমোচন কার্যক্রম মন্থর হয়ে পড়তে পারে। তাই প্রতিটি দেশের সরকারই চেষ্টা করে কীভাবে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা যায়।


বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না। অনেকদিন ধরেই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৩/২৪ শতাংশে ওঠানামা করছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকালে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল জিডিপির ২৮ শতাংশ। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য যে বাজেট প্রস্তাবনা জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে, সেখানে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এ লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জিত হবে, সে সম্পর্কে সঠিক কোনো দিকনির্দেশনা বাজেটে নেই। তাই অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ দেশে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।


মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এমসিসিআই) সহযোগিতায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘পলিসি এক্সচেঞ্জ’ তৃতীয়বারের মতো বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স জরিপ পরিচালনা করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে, প্রসঙ্গক্রমে এখানে তা উল্লেখ করা যেতে পারে। সংস্থাটি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যবসার পরিবেশের অবনতি ঘটেছে। সামগ্রিকভাবে ২০২৩ অর্থবছরে দেশ ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশের সূচকের ১০০ স্কোরের মধ্যে অর্জন করে ৫৮ দশমিক ৭৫, যা আগের বছর ছিল ৬১ দশমিক ৯৫। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণ সূচকের এ নিম্নমুখী প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বিশেষ বার্তা দিচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য যত চেষ্টা চালানো হোক না কেন, বাস্তবে অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না, বরং দিনদিন পরিস্থিরি অবনতি ঘটছে। কয়েক বছর আগে বিশ্বব্যাংকের ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। অর্থাৎ সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল নিম্নপর্যায়ে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রত্যাশা করা যায় না।


দেশে যেসব শিল্পকারখানা উৎপাদনরত আছে, সেগুলোর বেশির ভাগই এখন চরম সংকটের মধ্যে রয়েছে। কোনোভাবেই তারা স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। নতুন বিনিয়োগ খুব একটা আসছে না। যারা বিভিন্ন শিল্পকারখানার মালিক, তারাও নতুন করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেলের সমস্যার সঙ্গে আরও নানা ধরনের সমস্যা উৎপাদন খাতকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির যে আকার এবং যেভাবে অর্থনীতি এগিয়ে চলেছে, একে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার আরও বেশি হওয়া উচিত। কিন্তু এটি আমরা খুব শিগ্গিরই অর্জন করতে পারব বলে মনে হয় না। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত রয়েছেন। ফলে বিনিয়োগের হার তেমন একটা বাড়ছে না। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার ছিল জিডিপির ২৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। পরের বছর তা ২৫ দশমিক ২৫ শতাংশে উন্নীত হয়। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে এটা কিছুটা হ্রাস পেয়ে জিডিপির ২৪ দশমিক ০২ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার ছিল ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ হার ছিল জিডিপির ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পরের বছর তা ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশে নেমে আসে। এ অবস্থায় আগামী এক বছরের মধ্যে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার ২৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ থেকে কীভাবে ২৭ শতাংশে উন্নীত হবে, তা একমাত্র ভবিষ্যৎই বলতে পারবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও