উপজেলা পরিষদ কতটা প্রশাসনিক একাংশ

সমকাল সালেহিন চৌধুরী শুভ প্রকাশিত: ১২ জুন ২০২৪, ০৮:২৫

বাংলাদেশে বিদ্যমান স্থানীয় সরকারের উচ্চতর স্তর জেলা পরিষদ; নিম্নতম স্তর ইউনিয়ন পরিষদ। এই দুই স্তরের মধ্যবর্তী হলো উপজেলা। অবশ্য ১২টি সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় কোনো উপজেলা নেই। এগুলো বাদ দিলে সারাদেশের সব ইউনিয়ন ও গ্রাম কোনো না কোনো উপজেলার অধীনে। এমনকি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা, যেগুলোর অবকাঠামো ও জনবল উপজেলার চেয়ে অনেক বেশি, সেগুলোও উপজেলাভুক্ত। তবে উপজেলাকে গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার হিসেবে গণ্য করা হলেও আইন ও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। 


১৯৫৯ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বেসিক ডেমোক্রেসি অর্ডারের অধীনে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় অন্যান্য স্তরের সঙ্গে থানা পর্যায়ে থানা কাউন্সিলও গঠন করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল থানা পর্যায়ের সব কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে রাষ্ট্রপতির আদেশবলে এর নামকরণ হয় থানা উন্নয়ন কমিটি, যেখানে মহকুমা প্রশাসক পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান এবং সংশ্লিষ্ট থানার সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) ভাইস চেয়ারম্যান পদে থাকতেন। তবে বাস্তব কারণে মূলত সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। 


১৯৮২ সালে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন পুনর্গঠন) অধ্যাদেশ জারি করে থানা পর্যায়ে উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়, যেখানে জেলার সব দপ্তর, আদালত এমনকি সাব-জেলও স্থাপন করা হয়। ঘরের পাশে সব সরকারি সেবা চলে আসায় উপজেলা নিয়ে গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়। বস্তুত উপজেলা পদ্ধতির জনপ্রিয়তা এরশাদের রাজনৈতিক ভিত তৈরি করে দেয়। ওই ব্যবস্থায় জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একজন চেয়ারম্যান, অধস্তন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সব দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে উপজেলা পরিষদ গঠিত হতো। ভাইস চেয়ারম্যান পদবি ছিল না। প্রয়োজন হলে পরিষদের ভোটারধিকারপ্রাপ্ত সদস্য অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্য থেকে একজন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। ওই অধ্যাদেশের অধীনে দেশে দু’বার উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তবে দ্বিতীয় মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৯১ সালে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন পুনর্গঠন) বাতিল অধ্যাদেশের মাধ্যমে উপজেলা পদ্ধতি বিলোপ করা হয়। 


সংবিধানের ৫৯(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।’ ১৫২ অনুচ্ছেদে ‘প্রশাসনিক একাংশ’ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘প্রশাসনিক একাংশ’ অর্থ জেলা কিংবা এই সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য সাধনকল্পে আইনের দ্বারা অভিহিত অন্য কোনো এলাকা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে গঠিত থানা উন্নয়ন কমিটির এ মর্যাদা ছিল না।


উল্লেখ্য, স্থানীয় শাসন সংক্রান্ত ৫৯ ও ৬০ অনুচ্ছেদ দুটো ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ছিল, যেগুলো ১৯৭৫ সালের চতুর্থ সংশোধনীর কারণে লুপ্ত হয় এবং এরশাদের পতনের পর দ্বাদশ সংশাধনীর মাধ্যমে সংবিধানে আবার ফিরে আসে। এ কারণেই দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা পদ ফেরত ও উপজেলা ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে উচ্চ আদালতে গেলেও বিফল হন। অর্থাৎ আদালত উপজেলা ব্যবস্থা বাতিলকে বৈধ বলে রায় দেন। 


১৯৯১ সালে উপজেলা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেলে ওই স্তরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারি করা একটি সরকারি আদেশ দ্বারা থানা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। থানার অধীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা পর্যায়ক্রমে থানা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করতেন। পরে ১৯৯৮ সালে উপজেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করা হলে থানাগুলো পুনরায় উপজেলা হয়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত শুধু চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন না হওয়ায় উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়নি, যদিও আইনানুযায়ী পরিষদের সদস্যরা ছিলেন। 


উপজেলা এমন এক পরিষদ, যার নিজস্ব সদস্য মূলত তিনজন– এক চেয়ারম্যান ও দুই ভাইস চেয়ারম্যান। উপজেলা পরিষদের কেবল এই তিনটি পদেই প্রত্যক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আইনানুযায়ী উপজেলায় সব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র, উপজেলার সব ইউনিয়ন ও পৌরসভার মোট সংখ্যার তিন ভাগের এক ভাগ সংরক্ষিত মহিলা সদস্য উপজেলা পরিষদের সদস্য। অর্থাৎ উপজেলা পরিষদের ৬০-৮৫ শতাংশ সদস্য অন্য পরিষদ বা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান থেকে আসা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও