সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ফাঁকি

www.ajkerpatrika.com চিররঞ্জন সরকার প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৪, ১২:৩৬

গরিব ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তাসহ সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থাই হলো সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী। এটা এমন একটা নিরাপত্তা বেড়াজাল, যার মাধ্যমে সমাজের আয়-উপার্জনহীন ও পিছিয়ে পড়া মানুষকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়।


আমাদের জাতীয় সংবিধানের ১৫ (ঘ) অনুচ্ছেদে নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছে। কাগজে-কলমে এই খাতে প্রতিবছর বাজেট বরাদ্দ বাড়লেও প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ আরও কমে যায়। এ বছরের বাজেটেও তা ঘটেছে। বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা করছে সরকার, যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৭ দশমিক ০৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এই খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এই হিসাবে সামান্যই বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ।


সত্যিকার অর্থে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নয়, আগামী অর্থবছরে এমন কিছু বিষয়কে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের তালিকায় দেখানো হচ্ছে। যেমন—ধনী-গরিব সবাই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। আগামী অর্থবছরেও সরকার দেখাতে যাচ্ছে, ব্যাংকে টাকা রাখলে যে হারে সুদ পাওয়া যায়, তার চেয়ে বেশি হারে যতটুকু সুদ সঞ্চয়পত্রে দেওয়া হয়, ততটুকু হচ্ছে সামাজিক নিরাপত্তা।


আবার অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন এবং স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বৃত্তিকেও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির তালিকায় রাখা হচ্ছে। নতুন অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দের তিন ভাগের এক ভাগ সরকারি চাকুরের পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদের জন্য রাখা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বহুমুখী কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য রাখা হয়েছে বড় অঙ্কের টাকা। এমনকি বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণের খরচও সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দের মধ্যেই দেখানো হয়েছে। কৃষি খাতে ভর্তুকির পুরো অঙ্ককেই সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বলে বিবেচনা করছে।


সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের জন্য কলোনি নির্মাণ, উপকূল অঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তহবিল গঠন, চাকরিরত অবস্থায় মারা যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের জন্য অনুদান ইত্যাদি খাতের বরাদ্দকেও সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।


সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের ৩৩ শতাংশ যাচ্ছে পেনশন ও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধে। এর ২৭ শতাংশই খরচ হবে সরকারি চাকরিজীবী ও তাদের পরিবারের পেনশন বাবদ। এতে ৩৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। সঞ্চয়পত্রের সুদহারে সামাজিক নিরাপত্তা প্রিমিয়াম বাবদ যাবে আরও ৮ হাজার ৮২৮ কোটি টাকা, যা এই খাতে বরাদ্দের ৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দুই খাত মিলিয়ে চলে যাবে ৩৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এ দুই খাতে ৩০ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ যা দেখানো হচ্ছে, তা আসলে একধরনের গোঁজামিল।


সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের বাজেট বরাদ্দ জিডিপির ৩ শতাংশের মতো, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর গড় বরাদ্দ ৪ শতাংশ, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর গড় বরাদ্দ ৮ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর গড় ২০ শতাংশ। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের বরাদ্দ সবচেয়ে কম।


বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতার পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু আগামী অর্থবছরে এই প্রস্তাবসহ কোনো ভাতা বৃদ্ধির প্রস্তাবই আমলে নেওয়া হচ্ছে না। নগদ সহায়তার মধ্যে শুধু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। আর কারও ভাতা বাড়ছে না। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর উপবৃত্তি ১০০ টাকা বাড়ছে। উপবৃত্তি ৯৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১ হাজার ৫০ টাকা হচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও