কেমন ছিল ৫৩ বছরের ৫৪টি বাজেট
দেশের প্রথম বাজেট ছিল ছোট আকারের। আর ৫৩ বছর পর সেই বাজেটের কলেবর বড় হয়েছে, বেড়েছে প্রবৃদ্ধি। যত বাজেট দেওয়া হয়েছে, তার আকার কত ছিল, কে আর কবে তা উপস্থাপন করেছিলেন, পেশ করার সময় কী বলেছিলেন, তারই একটি বিবরণ দেওয়া হলো এখানে। বলে রাখা ভালো, বাজেট উপস্থাপন পদ্ধতির অনেক বদল হয়েছে। বাজেট পরিসংখ্যান প্রকাশের পদ্ধতিরও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সরকারের আয় ও ব্যয়ের খাতে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপির বাইরে নতুন নতুন উন্নয়ন ব্যয়ের খাত যুক্ত হয়েছে। ফলে এডিপির তুলনায় উন্নয়ন বাজেট আরও বড় হয়েছে।
১. মুজিবনগর সরকার, ১৯ জুলাই ১৯৭১
রাজস্ব আয় ৭,৭৪,১৮,৯৯৮ টাকা, ব্যয় ৮,৬২,৪৮,২০৪ টাকা।
প্রথম বাজেটটি দিয়েছিল মুজিবনগর সরকার। স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য দরকারি, অপরিহার্য ব্যয় মেটাতেই এই বাজেট। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ের জন্য তৈরি হয়েছিল এই বাজেট।
২. তাজউদ্দীন আহমদ, ১৯৭২/১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর, ৩০ জুন, ১৯৭২
একই সঙ্গে দুই অর্থবছরের বাজেট পেশ করা হয়েছিল। ১৯৭১-৭২ অর্থবছরের বাজেটের মেয়াদকাল ছিল ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ৩০ জুন, ১৯৭২।
ক. ১৯৭১-৭২ অর্থবছর: রাজস্ব আয় ৪৮.৫২ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় ৯৯.১৩ কোটি টাকা, উন্নয়ন ব্যয় ৫১.৪৬ কোটি টাকা
খ. ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর: রাজস্ব আয় ২৯১.৫৮ কোটি, রাজস্ব ব্যয় ২১৮.৪৩ কোটি টাকা, উদ্বৃত্ত ৭৩.১৫ কোটি, উন্নয়ন, পুনর্নির্মাণ ও পুনর্বাসন ব্যয় ৫০১ কোটি টাকা, এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ৩১৮.৩০ কোটি টাকা।
মোট বাজেট ৭১৯.৪৩ কোটি, মোট আয় ২৮৫.৩৮ কোটি, মোট ঘাটতি ৪২৭.৮৫ কোটি টাকা।
বাজেটকে বলা হয়েছিল পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনধর্মী। লক্ষ্য ছিল ভবিষ্যৎ শোষণহীন, সমাজতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি স্থাপন। বক্তৃতার শুরুতেই অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বেতার ও টেলিভিশনের মাধ্যমে এই বাজেট প্রচার না করে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করতে পারলে আমি সুখী হতাম। তবে আমি আশা করি যে এর পরে আর কোনো দিন এইভাবে আমাদের বাজেট প্রচার করতে হবে না।’
৩. তাজউদ্দীন আহমদ, ১৯৭৩-৭৪ অর্থবছর, ১৪ জুন, ১৯৭৩
রাজস্ব আয় ৪১১.৩১ কোটি টাকা, রাজস্ব ব্যয় ২৯৫.৩০ কোটি টাকা, রাজস্ব উদ্বৃত্ত ১১৬.০১ কোটি টাকা, উন্নয়ন ও পুনর্নির্মাণ ব্যয় ৫২৫.৩৫ কোটি টাকা, এর মধ্যে এডিপি ৪৪৯.৯৭ কোটি টাকা।
মোট বাজেট ৮২০.৬৫ কোটি টাকা, মোট আয় ৩৭৪.৩২ কোটি টাকা, মোট ঘাটতি ৪০৯.৩৪ কোটি টাকা।
বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বৈদেশিক নির্ভরশীলতা ঘুচিয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদের সদ্ব্যবহার করার মতো প্রকল্প ও নীতি গ্রহণের কথা বলেছিলেন। তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, ‘আমাদের উন্নয়নের প্রথম বৎসরে অর্থ ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন, জাতীয় পুনর্গঠন এবং খাদ্য ও অন্যান্য দ্রব্য সংগ্রহের জরুরি তাগাদায় আমরা বৃহৎ পরিমাণে বৈদেশিক সাহায্য নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। সাহায্যকারী দেশসমূহের কাছে আমরা ঋণী। কিন্তু তাঁদের প্রতি এবং নিজেদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব হলো এ কথা প্রতিপন্ন করা যে আন্তর্জাতিক সাহায্যের স্থায়ী প্রার্থী আমরা নই, প্রয়োজনীয় কষ্ট স্বীকার আমরা করতে প্রস্তুত এবং বৈদেশিক সাহায্যকে আমরা উৎপাদনক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে প্রয়াসী। সকল স্তরে আমরা আওতাধীন ক্ষমতায় পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছি, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার পরই শুধু নতুন বৈদেশিক সাহায্য সন্ধান করতে পারি। যাতে বৈদেশিক নির্ভরশীলতা ঘুচিয়ে আমরা অভ্যন্তরীণ সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে পারি, তেমন বিনিয়োগ প্রকল্প ও নীতি আমাদের গ্রহণ করা উচিত। সেই সঙ্গে রপ্তানি বৃদ্ধি করতে হবে এবং আমদানি বিকল্পের বিকাশ সাধন করতে হবে।’