উচ্চ পদে দুর্নীতির জন্য সরকার বিব্রত হয় গণতন্ত্র থাকলে

প্রথম আলো কামাল আহমেদ প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৪, ১৯:৪০

বাংলাদেশে অনেক দিন আগে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (তখন রেডক্রস বলা হতো) লটারিতে লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে প্রতিবছর কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করত। পরে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান তা করলেও সরকার কখনো বাণিজ্যিকভাবে লটারি চালুর অনুমতি দেয়নি। ইউরোপ-আমেরিকায় এটি নিয়মিত হয়। কিছুদিন আগে আমেরিকায় এ রকম এক পুরস্কারের পরিমাণ শতকোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।


গত এপ্রিলে ১৩০ কোটি ডলারের সেই পাওয়ারবল জ্যাকপট বিজয়ী হয়েছেন চেং ‘চার্লি’ সেফানের। আমাদের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা না থাকলে তাঁর হঠাৎ করে এত বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি বা তাঁর স্ত্রী-কন্যাদের লটারি জেতার কথা হয়তো বলতে পারতেন। 


পুলিশের সর্বোচ্চ তিনটি পদে আসীন হওয়ার বিরল সুযোগ পাওয়া বেনজীর আহমেদের সম্পদের যেসব বিবরণ এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলার সূত্রে জানা যাচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষের বিস্ময়ের ঘোর কাটতে কত দিন লাগবে, কে জানে?

অবসরে যাওয়ার পর ছয় মাস না যেতেই তাঁর হাতে এত উপচে পড়া নগদ টাকা যে তিনি এক দিনে গুলশানে চারটি ফ্ল্যাট কিনে ফেলেছেন। তাঁদের ৬২১ বিঘা জমির সন্ধান মিলেছে, যার বেশির ভাগই তাঁর স্ত্রীর নামে। ব্যাংকে তাঁদের ৩৩টি অ্যাকাউন্ট আছে। বলা হচ্ছে, বিদেশেও সম্পদ থাকতে পারে এবং তার সন্ধান চলছে। 


পুলিশের বিরুদ্ধে কারণে-অকারণে ঘুষ খাওয়ার কথা এত বেশি শোনা যায় যে এই দুর্নামকে অনেকেই পেশাটির সমার্থক করে ফেলেন। কিন্তু সর্বোচ্চ ৩০–৩৫ বছর চাকরি করে কেউ যদি ঘুষখোর হিসেবেও পরিচিতি পান, তাঁর পক্ষেও এতটা সম্পদ অর্জন করা প্রায় অসম্ভব।


জবরদস্তি করে বা ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়, দখলবাজি, কেনাকাটার কমিশন, অধস্তনদের উপরি আয়ে ভাগ বসানো এবং বিভিন্ন অপরাধী চক্রের কাছ থেকে বড় অঙ্কের মাসোহারার মতো অনেকগুলো আয়ের সূত্র ছাড়া এত অস্বাভাবিক সম্পদস্ফীতির আর কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হতে পারে না। স্বামী কিংবা পিতা হিসেবে তাঁর এ ঈর্ষণীয় ধন অর্জনে তাঁর স্ত্রী-কন্যারা নিশ্চয়ই গৌরববোধ করছেন। না হলে তাঁদের সম্মতি ছাড়া তো তাঁদের নামে সম্পদ করা সম্ভব ছিল না।


এ তো গেল ব্যক্তি বা পরিবারের কথা। কিন্তু এতটা গুরুতর অপরাধ সংঘটনের সময়ে রাষ্ট্র এবং সরকারের ভূমিকা কী ছিল? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ও সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ ইস্যুতে সরকার বিব্রত নয়।


তিনি দাবি করেছেন, সরকারের বিচার করার সৎসাহস আছে। সরকার তাঁদের অপরাধ অস্বীকার করে পার পেয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়নি। সরকার যে বিব্রত নয়, তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। বিব্রত হতে হলে যে বোধ বা বিবেচনা থাকতে হয়, তা হলো গণতন্ত্রে আস্থা এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি। এত বড় অপরাধ তাঁদের সরকারের অধীনে হয়েছে, অথচ তাঁরা টের পাননি বলে যদি তাঁরা বলতে চান, তাতে প্রমাণিত হয় যে সরকার পরিচালনার যোগ্যতায় তাঁদের ঘাটতি আছে। আর এ রকম ঘাটতি বা ব্যর্থতার জন্য যেকোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার বা সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগ করতে হতো। 


সরকারের নিয়ন্ত্রণের অধীন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ে এ ধরনের অপরাধমূলক কাজ বছরের পর বছর চলতে পারার ব্যাখ্যা যদি মন্ত্রীদের ব্যর্থতা না হয়, তাহলে অন্য যে ব্যাখ্যাটি আসে, তা আরও গুরুতর। অর্থাৎ সরকার এ অপরাধের কথা জানত, কিন্তু তা বন্ধের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জেনেশুনেও অপরাধ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেওয়ার ব্যাখ্যা তাহলে কী? অপরাধ যারা করছিল, তারা সরকারের জন্য এতটাই অপরিহার্য ছিল যে ওই দুর্নীতি মেনে নেওয়াই শ্রেয় বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও