মগড়া নদী মরছে, আমরা কি শুধু দেখেই যাব
প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতে খেটে খাওয়া গরিব মানুষের মৃত্যুর খবর আসছে। চলতি বছর এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৯৫ জন। শুধু মে মাসে (১৮ তারিখ পর্যন্ত) নিহত হয়েছেন ৬৫ জন। বজ্রপাত মোকাবিলায় তালগাছ রোপণের কর্মসূচি স্থগিত রেখে এখন সরকার বজ্রপাত প্রতিরোধক বা লাইটেনিং এরেস্টার স্থাপনের কাজে মন দিয়েছে। সেগুলো দেখতেই এবারের হাওরে যাত্রা।
নেত্রকোনা বাসস্ট্যান্ডে নেমে কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) খামারের পাশ দিয়ে শহরের দিকে যেতে যেতে মনে পড়ে ১৯৭১ সালের কথা। ঢাকা মুক্ত হওয়ার কমপক্ষে এক সপ্তাহ আগে যুদ্ধ করে নেত্রকোনা মুক্ত হয়েছিল। আজকের অনেকেই জানেন না, সেদিন বিএডিসির খামারটা ছিল যুদ্ধক্ষেত্র। পাকিস্তানি বাহিনী আর তাদের দোসররা ময়মনসিংহ হয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথটা খোলা রাখার জন্য মরিয়া ছিল খামারের দখল নিয়ে।
ডিসেম্বরের ৮ তারিখে পাঁচ ঘণ্টার সেই অবিরাম যুদ্ধ হয়েছিল নেত্রকোনা শহরের মগড়া নদীর তীর ও বিএডিসির খামার এলাকায়। এই যুদ্ধ নিয়ে খুব একটা আলোচনা আজকাল শোনা যায় না। কেউ মনে রাখেনি ২৮ ও ২৯ আগস্ট মগড়া নদীর পাড়ের যুদ্ধের কথা, সেই যুদ্ধে মগড়া নদীরও একটা ভূমিকা ছিল। মগড়ার অদ্ভুত বাঁকগুলো মদন এলাকার সেই যুদ্ধে দুর্গের কাজ করেছিল।
সেই মগড়ার এখন মরণদশা। লাইটেনিং এরেসটার নয়, মগড়া আমাদের টানতে থাকে আবু জাফরের গানের মতো—‘একবার আয় দেখে যা কেমন আছি।’ অভিমানী সুনীলের কবিতার মতো ‘আমি কীরকম ভাবে বেঁচে আছি তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ/ এই কী নদীজন্ম (মানুষজন্ম)? নাকি শেষ/ পুরোহিত-কঙ্কালের পাশা খেলা!...’
মগড়ার উত্থান
ব্রহ্মপুত্র নদ থেকেই মগড়ার জন্ম। সেনেরচরের কাছে খড়িয়া নদীর ধারা থেকেই বেরিয়ে আসে মগড়া নদীর প্রবাহ। সেখান থেকে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলার বুড়বুড়িয়া বিলে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার যাত্রা শুরু হয়েছে।
বুড়বুড়িয়া বিল থেকে বেরিয়ে গজারিয়া ও রাংসা নদীর স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফুলপুরের ঢাকুয়া এলাকার ভেতর দিয়ে সরাসরি পূর্ব দিকে ধলাই নামে প্রবাহিত হয়েছে। পূর্বধলা উপজেলার হোগলা বাজারের পাশ দিয়ে পূর্বধলা সদরের ভেতর দিয়ে ত্রিমোহনীতে এসে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়।
ত্রিমোহনীতে এলে উত্তর দিক থেকে এসে লাউয়ারী নদী তার সঙ্গে মিলিত হয়। মূলত এখান থেকেই এই মিলিত ধারা মগড়া নামে পরিচিতি পায়। এরপর প্রথমে পাঁচ মাইল পর্যন্ত দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দয়াগঞ্জ ঘাট থেকে সরাসরি পূর্ব দিকে এঁকেবেঁকে নেত্রকোনা শহর হয়ে আটপাড়া উপজেলার দিকে চলে গেছে। পশ্চিম দিক থেকে শ্যামগঞ্জ হয়ে দয়াগঞ্জ ঘাটের কাছে মগড়ার সঙ্গে আবার ধলাইয়ের স্রোতোধারার মিলন হয়।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জীববৈচিত্র সংরক্ষণ
- নদী দূষণ
- নদী রক্ষা