মরুদেশের বানভাসি মানুষ ও জলবায়ু পরিবর্তন
গত সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের জাঁকজমকপূর্ণ শহর দুবাই নজিরবিহীন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছে। বলা হচ্ছে, গত ৭৫ বছরের মধ্যে এত বৃষ্টিপাত সংযুক্ত আরব আমিরাতের সবচেয়ে বড় এই শহরটি আর প্রত্যক্ষ করেনি। দুবাইয়ের আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় যে বৃষ্টিপাত হয়েছে তা সাধারণত দেড় বছরের বৃষ্টিপাতের সমান। ১৯৪৯ সালের পর থেকে এমন বৃষ্টিপাত আর কখনো হয়নি। সংবাদমাধ্যমের ভাষ্যমতে, এবারের অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতজনিত কারণে দুবাই শহরের রাস্তাঘাট, শপিংমল, মেট্রোস্টেশন, বিমানবন্দর সব ক্ষেত্রেই নাকি বানের পানিতে টইটুম্বুর। অতিবৃষ্টিজনিত বন্যায় রাস্তায় গাড়ি, বিমানবন্দরে বিমান সব কিছুই থইথই জলে ভাসছে। হঠাৎ মরুভূমির দেশে এত বৃষ্টিপাত শুধু দুবাইয়ের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কারণ হয়নি, প্রাণচঞ্চল দুবাই শহর থমকে গেছে, আটকা পড়েছে হাজার হাজার পর্যটক।
মরুর শহর দুবাই ঝড়বৃষ্টি ও বন্যার জন্য কোনোভাবেই প্রস্তুত না, এটা হয়তো তাদের প্রত্যাশার মধ্যেও ছিল না। আর ৭৫ বছরের আগের স্থানীয় জেলেদের একটি ছোট শহর দুবাই আর এখনকার দুবাই এই দুয়ের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য তা সহজেই বোঝা যায়। এই দীর্ঘ সময়ে দুবাইয়ের জৌলুস তৈরি হয়েছে। এই নতুন দুবাই যখন তৈরি হয়েছে তখন জলবায়ু পরিবর্তন ও এর কারণে সম্ভাব্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় সম্পর্কে ভাবা হয়নি। তাই সমস্যা শুধু নজিরবিহীন বৃষ্টিপাতই না, সমস্যার একটা বড় অংশ তৈরি হয়েছে শহর জুড়ে যেভাবে অবকাঠামো তৈরি হয়েছে তা কোনোভাবেই প্রকৃতির এই খামখেয়ালি আচরণের জন্য প্রস্তুত না। এই সময়ে পৃথিবীর জলবায়ুর যে পরিবর্তনটা হয়েছে প্রধানত মানুষের কর্মকাণ্ডের ফলে, বিশেষ করে ধনী দেশগুলোর যথেচ্ছাচার ভোগ ও বিলাস-বসনের কারণে। সে কারণে প্রকৃতি যে এমন খামখেয়ালি আচরণ আবারও করবে না এমন নিশ্চয়তা দেওয়ার সুযোগ আছে কি?
তবে মূল কারণটা সেখানেও না। কেন এই ঝড়বৃষ্টি তা নিয়ে ইতিমধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন দুবাই কর্র্তৃপক্ষ কৃত্রিম উপায় বৃষ্টিপাত সংঘটিত করার প্রচেষ্টার জন্যই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি। এ নিয়ে সেখানকার সামাজিক মাধ্যমে বেশ সমালোচনার ঝড় উঠেছে। দুবাই ও মধ্যপ্রাচ্যের বড় বড় শহরগুলোই প্রায়ই কৃত্রিম উপায়ে মেঘ ঘনীভূত করে মরুর বুকে বৃষ্টি নামিয়ে থাকে। দুবাইয়ে কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টিপাতের চল বা ক্লাউড সিডিং শুরু হয়েছিল সেই ২০০২ সাল থেকে। সমালোচকরা বলেন, কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টিপাত ঘটনার প্রচেষ্টার ফলে এ ধরনের আকস্মিক বৃষ্টিপাতের ঘটনা ঘটেছে। তবে দুবাইয়ের আবহাওয়া দপ্তর এই দাবি অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এ সময়ে ঋতু পরিবর্তনের কারণে এই বৃষ্টিপাত এবং এ বছর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের নজির তৈরি হয়েছে। দুবাইয়ের অতিবৃষ্টি তারই একটি ধারাবাহিকতা। তবে অনেক বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই অতিবৃষ্টির জন্য দায়ী ধারাবাহিক জলবায়ু পরিবর্তন, ক্লাউড সিডিং করে এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত ঘটানো সম্ভব না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই পুরো অঞ্চল জুড়ে একটি মেঘমালা বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে আর তা ঘটেছে উষ্ণায়নের ফলে বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা সঞ্চয় হওয়ার কারণে।