জাহাজটি জলদস্যুমুক্ত করার কার্যকর বিকল্প ছিল
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ইশফাক ইলাহী চৌধুরী, এনডিসি, পিএসসি ৩৫ বছর বিমানবাহিনীর কর্মজীবন শেষে ২০০৩ সালে এয়ার কমডোর হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। তিনি স্টাফ কলেজ ও ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজেও দীর্ঘদিন প্রশিক্ষক ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান এয়ারফোর্সে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর তিনি ১৯৭৫ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ১৯৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। এ ছাড়া ডিফেন্স স্টাডিজে স্নাতকোত্তর এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন।
ভারত মহাসাগর থেকে বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ছিনতাইয়ের এক মাস পর ১৩ এপ্রিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা নাবিকসহ মুক্তি দিয়েছে। বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী: জিম্মিদশায় নাবিকরা নিশ্চয় নানাভাবে কষ্ট পেয়েছেন। তবে সবাই অক্ষত এবং ছাড়া পেয়ে দেশে আসছেন, এটা আমাদের সবার জন্য স্বস্তির বিষয়। তবে যেভাবে তারা জিম্মিদশায় পড়েছেন এবং তাদের মুক্তিতে যে প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে, তাতে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ আছে।
পর্যবেক্ষণগুলো যদি বলেন
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী: নাবিকদের মুক্তিপণ দিয়ে মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এর বাইরে কি মুক্তির পথ খোলা ছিল না? জাহাজের মালিকরা যেভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতি তুলে ধরছিলেন, তাদের ব্যাখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। বিশেষ করে নিরাপত্তা বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়।
জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে নাবিকদের সুরক্ষায় জাহাজটিতে অনেক দিক থেকেই নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল। সেটাই বলছেন?
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী: নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়টি খুবই স্পষ্ট। বস্তুত জাহাজে কোনো ধরনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। যদিও কোম্পানি বলছিল, তাদের জাহাজ এত দূর দিয়ে চলছিল যে, তাতে জলদস্যুদের হামলার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা ছিল না। বাস্তবে সেটা হয়নি। জাহাজ অরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে কোম্পানির যুক্তি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
জাহাজ সুরক্ষায় কী করা প্রয়োজন ছিল?
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী: ভারত মহাসাগরে পূর্ব আফ্রিকা উপকূলের সমুদ্রপথটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। এ রুটসহ সাগরে জলদস্যুতা প্রতিরোধ এবং সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংগঠন ইউনাইটেড কিংডম মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস- ইউকেএমটিও। তারা জাহাজ সুরক্ষায় বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়ে থাকে। ইউকেএমটিওর নির্দেশনায় আর্মড গার্ড তথা অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের বিষয়টি অন্যতম। অথচ এমভি আবদুল্লাহতে কোনো অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন না। নিরাপত্তারক্ষীরা তাদের বাধা দিলে জলদস্যুরা জাহাজে ঘেঁষতেই
পারত না।
নিরপত্তারক্ষীদের খরচ কে বহন করবে?
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী: স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তারক্ষীদের খরচ কোম্পানিই বহন করবে। কোম্পানির জাহাজ সুরক্ষায় এটি তেমন কোনো ব্যয়সাপেক্ষ বিষয় নয়। তা ছাড়া এসব জাহাজের নিজস্ব একটা ওয়াটার পাম্প সিস্টেম থাকে। জলদস্যুরা জাহাজের কাছে এলে জোরে পানির স্প্রে করলে তারা জাহাজে উঠতে পারবে না। এটা কোনো খরচেরই ব্যাপার নয়।
তার মানে, প্রাথমিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাই জাহাজটিতে ছিল না?
ইশফাক ইলাহী চৌধুরী: না, একদম ছিল না। এমনকি জলদস্যুরা অতি সহজে যেভাবে জাহাজে উঠে গেল এবং নাবিকরা যেভাবে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেন, সেটা বিস্ময়কর। এর পর জলদস্যুরা জাহাজটি সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যায়। সেখানে অনেক দিন জাহাজটি স্থির ছিল। তখনও দস্যুদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- জলদস্যু
- জাহাজ
- নিরাপত্তা ব্যবস্থা
- জিম্মি