রক্ষা করতে হবে জাহাঙ্গীরনগরের উদ্ভিদ

www.ajkerpatrika.com মৃত্যুঞ্জয় রায় প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৭

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের উদ্ভিদ গবেষক এম এ রহিম খবর দিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সুন্দর বনে’ ভুঁই ডালিমের ফুল ফুটেছে। ফোটা ফুল দেখতে হলে সকাল ৮টার মধ্যেই সেখানে যেতে হবে। না হলে সেগুলো ঝরে যাবে। বিপন্ন এই উদ্ভিদের দর্শন যেকোনো উদ্ভিদপ্রেমীর জন্য এক দুর্লভ সুযোগ। এই আমন্ত্রণ উপেক্ষা করা কঠিন। তাই সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম সেই বিরল ও বিপন্ন গাছের ফুলগুলো দেখতে। চৈত্রসংক্রান্তির দিন। দুজন মিলে নেমে পড়লাম সেই ‘সুন্দর বন’ দর্শনে।


ঝাঁঝাঁ রোদে চারদিক চকচক করছে। বসন্তের নতুন কচি সবুজ পাতারা আড়মোড়া ভেঙে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সুন্দর বন’কে ষোড়শীর মতোই লাবণ্যময়ী করে তুলেছে। যেদিকে তাকাই, কেবল সবুজ আর সবুজ, শ্যামল সুন্দরে ভেসে যাচ্ছে চারদিক। ছোট্ট একফালি শালবন, পাতা ঝরে তলাটা বাদামি হয়ে আছে। শুকনো পাতাগুলোর ওপর পা পড়তেই কী চমৎকার করে মচমচ আওয়াজ হচ্ছে, পাখি ডাকছে, দলে দলে প্রজাপতি উড়ছে। গাছের গা-ভরা কচি পাতাদের উল্লাস, কয়েক দিন পরই ডালের মাথায় মাথায় আসবে শাল ফুলেরা। এরই যেন প্রতীক্ষায় রয়েছে শালগাছগুলো। গাছেদের কী অদ্ভুত মমতা! একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ওপরে উঠে যাচ্ছে। এত যে জড়াজড়ি, একে অন্যের ওপর আশ্রয় করে বেড়ে ওঠা—কিছুতেই যেন গাছেরা এতে কিছু মনে করে না।


শালগাছের সহচর কিছু গাছ আছে, যেগুলো শুধু শালবনেই দেখা যায়। আহা, কী মমতায় বনরঙ্গনের গাছগুলো শালগাছের পায়ের কাছে লুটিয়ে আছে, কোনো কোনোটা শালগাছে হেলান দিয়ে দিব্যি থোকা থোকা ফুল ফোটাচ্ছে, সেই সব ফুলের মধুগন্ধে আমোদিত ‘সুন্দর বনের’ বাতাস! রহিম ভাই বললেন, আর কটা দিন আগে এলে বনরঙ্গনের বসন্তশোভাটা আরও ভালো করে দেখতে পারতেন, এখন ফুল তো শেষের পথে, শুকিয়ে গেছে অনেক ফুল। খুঁজে খুঁজে দেখালেন দুই রকমের বনরঙ্গন ফুল—একটার রং সাদা, ওগুলোর ঘ্রাণ বেশি। অন্যটা গোলাপি সাদা, সেগুলোর ঘ্রাণ কম। তার পরও পেলাম তার শোভা ও সৌরভ, আমার জন্য তা অপার্থিব আনন্দের। শালবনের সাথি এই গাছ বনে অনেকই দেখলাম, যেগুলো বহুদিন খুঁজেও টাঙ্গাইলের অনেক শালবনে পাইনি। এ সময় ফোটে বলে একে কেউ কেউ বলে বিজু ফুল। বিজু হলো চাকমাদের এক অন্যতম প্রধান আনন্দ উৎসব। বাংলা বছরের শেষ দুই দিন ও পয়লা বৈশাখের দিন মিলে তারা এই উৎসব পালন করে, যার প্রধান উপকরণ ফুল। ভোরের আলো ফোটার আগেই চাকমা ছেলে-মেয়েরা ফুল সংগ্রহের জন্য বেরিয়ে পড়ে। বসন্ত ঋতু হওয়ায় মেলে অনেক ফুলের দেখা। সংগ্রহের পর সেসব ফুল তারা তিন ভাগ করে। এক ভাগ দিয়ে ভগবান বুদ্ধের পূজা করে, আরেক ভাগ জলে ভাসিয়ে দেয় এবং শেষ ভাগের ফুলগুলো দিয়ে ঘরবাড়ি সাজায়। বনের ভেতরে বিজু ফুলগুলো দেখে এসব কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে আরেকটা বিপন্ন গাছের কাছে এসে পড়েছি বুঝতে পারিনি।


রহিম ভাই বাংলাদেশের লাল তালিকাভুক্ত, অর্থাৎ মহাবিপন্ন দুটো গাছ দেখালেন—একটা বনখেজুর, অন্যটা ওলানানা। যে গাছগুলো বাংলাদেশের উদ্ভিজ্জগৎ থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে, সেই সব গাছের দেখা এখানে অপ্রত্যাশিতভাবে পাব তা কল্পনাও করিনি। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি বনখেজুরের একটা পুরুষ ও আরেকটা স্ত্রী গাছের দেখাও পেলাম। বনখেজুরগাছের কাণ্ড বড়জোর ফুটখানেক লম্বা হবে, ওইটুকু লম্বা হতেই হয়তো তার ১০ থেকে ১২ বছর সময় লেগেছে। সৌভাগ্য যে, দুটো গাছে ফুল ফোটা দেখেই গাছ দুটোকে আলাদাভাবে চিনতে পারা গেল। না হলে এদের স্বতন্ত্রভাবে বোঝার কোনো উপায়ই ছিল না। সারা বনে শণ-উলু তৃণদের দাপট। এরই মধ্যে থোকা থোকা সবুজ ফুলের মঞ্জরি নিয়ে হেসে উঠেছে খুদি জাম আর পাইন্যাজামের গাছেরা, অসংখ্য গাছ। অথচ সচরাচর এসব গাছের দেখাই মেলে না। যে আনইগাছ খুঁজেছি হন্যে হয়ে টাঙ্গাইলের শালবনে, সেই আনইগাছকে উপেক্ষা করে সামনে যাওয়ার পথ খুঁজতে যেন হিমশিম খেলাম। বরইগাছের মতো পাতা, লতানো গাছের ডালপালা তীক্ষ্ণ কাঁটায় ভরা, প্রায় প্রতিটি ডালের আগায় থোকায় থোকায় ঝুলছে আনই বরই। কয়েক দিনের মধ্যে ওগুলো পেকে হলদেটে হবে, নরম আর মিষ্টি সেই শাঁস খাওয়ার মজাই আলাদা।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

এই সম্পর্কিত

আরও