ছাত্ররাজনীতি বলে এখন কি কিছু আছে?
ছাত্ররাজনীতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। সম্প্রতি বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি করা না-করা নিয়ে বিতর্ক চরম পর্যায়ে উঠেছে। এখানে বেশ কয়েকটি বিষয় প্রাসঙ্গিক। প্রথমটি হলো রাজনীতি, দ্বিতীয়টি ছাত্ররাজনীতি, তৃতীয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক আচরণটা কেমন হওয়া দরকার।
ঔপনিবেশিক আমলে আমাদের এখানে একধরনের রাজনীতি ছিল। সেটি হলো স্বাধীনতার স্পৃহা ও তার জন্য প্রস্তুতি, আন্দোলন ও সংগঠন। এর একপর্যায়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। স্বাধীন হওয়ার পরে আমরা দেখলাম যে অতীতের যে রাজনীতি, সেই রাজনীতিতে ছেদ পড়ল না। সেই আগের মতোই আমরা মাঠে গিয়ে বলি, সংগ্রামী ভাইয়েরা আমার। প্রশ্ন হলো, সংগ্রামটা কার বিরুদ্ধে?
একটা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমরা একসময় দেখেছি, সমাজতন্ত্রের আন্দোলন হয়েছে। তরুণেরাই ছিল সেই আন্দোলনের ভ্যানগার্ড বা সম্মুখসারিতে। ষাট ও সত্তরের দশকে পশ্চিম গোলার্ধ থেকে শুরু করে আমাদের এই অঞ্চল—সবখানেই সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের জোয়ার ছিল। আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন মুখ থুবড়ে পড়ার পর থেকে এই ধারার আন্দোলন মিইয়ে গেছে। কেননা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন—এসব দেশের পৃষ্ঠপোষকতায়ই দেশে দেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন চলত। সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টি বিভিন্ন দেশে আর্থিক সাহায্য দিত, বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে রীতিমতো প্রতিপালন করত।
এখন বলা চলে, পৃথিবীর কোনো দেশেই আর সমাজতন্ত্র নেই। চীনে কমিউনিস্ট পার্টির নামে রাষ্ট্রীয় পুঁজির ধারকেরা শাসন করছেন। সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনটা পৃথিবীব্যাপী প্রায় ‘নাই’ হয়ে গেলেও আমরা যেহেতু অতীতের জাবরকাটায় খুবই অভ্যস্ত ও পছন্দ করি, তাই আমরা সেই চল্লিশ, পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকের রাজনীতি নিয়ে এখনো টেবিল কাঁপাই, চায়ের কাপে ঝড় তুলি।
আমাদের দেশে একাত্তর-পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির যে ধারা দেখছি, সেটি কোনো দিক থেকেই ইতিবাচক নয়। পাকিস্তান আমলে একটা চেষ্টা হয়েছিল—জনসমর্থনহীন সরকার কিছু গুন্ডাপান্ডা দিয়ে ছাত্রসংগঠন তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্তানি করত। এটা আমরা ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ফেডারেশন বা এনএসএফের ক্ষেত্রে দেখেছি। কিন্তু সেটিরও একটি সীমা ছিল। উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের পরে তাদের অনেকে গা ঢাকা দেয়, অনেকে পিটুনি খেয়ে পালিয়ে যায়, অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর এ ধরনের ছাত্ররাজনীতি আর ছিল না।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ছাত্র রাজনীতি