অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড কবে নিষিদ্ধ হবে

www.ajkerpatrika.com পাভেল পার্থ প্রকাশিত: ০৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৪৮

আমাদের কি বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিনাথ মার্ডী ও রবি মার্ডী নামে দুই গরিব সাঁওতাল কৃষকের কথা মনে আছে? সেচের পানি না পেয়ে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। মনে থাকার কোনো কারণ নেই। কারণ, গ্রামেগঞ্জে কৃষকের ঘরে বা হাটবাজারে বিষ থাকে। চাইলে কেউ বিষ খেয়ে মরতে পারে কিংবা বিষক্রিয়ায় গ্রামে, কৃষিজীবনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু আমাদের কি ২০২৩ সালের জুন মাসে ঢাকা শহরের একটি ঘটনা মনে আছে? বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক অভিজাত পরিবারের দুই শিশু বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিল? না, তারা আত্মহত্যা করেনি। না, তাদের হয়তো খুনও করা হয়নি। তারা কোনো কৃষক পরিবারের ছিল না, এমনকি তারা হয়তো তাদের ছাদবাগান থাকলে সেখানেও যায়নি সেদিন। তাদের বেঘোরে মৃত্যু ঘটেছিল বিষের কারণেই। কারণ তাদের বাসায় তেলাপোকা মারতে ভয়াবহ রাসায়নিক বিষ অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহৃত হয়েছিল। শায়ান মোবারত ও শাহির মোবারত নামে দুই উচ্ছল ভাইয়ের করুণ মৃত্যু ঘটে সেই ফসফাইডের বিষক্রিয়ায়। এ ঘটনার পর ‘ডিসিএস অর্গানাইজেশন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। হয়তো ঘটনাটি ঢাকার অভিজাত এলাকার ধনী পরিবারে ঘটেছে কিংবা কর্তৃপক্ষ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চেয়েছে দ্রুত।


বালাইনাশকের বিষক্রিয়ায় দেশজুড়ে মানুষ, পশুপাখি, গাছপালা, অণুজীব, পতঙ্গসহ বহু প্রাণের মৃত্যু ঘটছে প্রতিনিয়ত। এসব মৃত্যুর সব কিন্তু আত্মহত্যা নয়, রাসায়নিক কৃষিকাঠামোর ফলে হত্যাও আছে। তবে এই বালাইনাশকের কারণে খুন-জখমের বিচার, দণ্ড, শাস্তি হয়েছে এমন উদাহরণ বিরল। যা হোক, বসুন্ধরার দুই শিশুর মৃত্যু কেবল নয়, অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় মৃত্যু বিশ্বজুড়ে এক প্রশ্নহীন ‘সাধারণ’ ঘটনা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০১৯ সালের ১৬ নভেম্বর রোমানিয়ার তিমিসোয়ারায়ও ঢাকার বসুন্ধরার মতোই ঘরের ভেতরে ফসফাইড ধোঁয়া ব্যবহারের ফলে দুই শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু ঘটে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্রান্সের কাছাকাছি একটি কার্গো জাহাজে ফসফাইডের বিষক্রিয়ায় বহু মানুষ মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং একজন মারা যায়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের ট্রেইলর পার্কে ইঁদুর মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হলে পার্কে ঘুরতে আসা চারটি শিশুর নিদারুণ মৃত্যু ঘটে বিষক্রিয়ায়। থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক হোটেলে বিছানার ছারপোকা মারার জন্য এই ট্যাবলেট ব্যবহৃত হয় এবং অধিকাংশ সময় হোটেলের কক্ষ বন্ধ থাকে এবং এতে দেখা গেছে প্রচুর দুর্ঘটনা ঘটে। উত্তর ভারতে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ট্যাবলেট খুব বেশি ব্যবহৃত হয়। এমনকি ইরানে আত্মহত্যার ক্ষেত্রে এই বিষ ব্যবহৃত হয়। ২০০৯ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফসফাইড আছে এমন সব ধরনের বালাইনাশক নিষিদ্ধ করা হয়।


বাংলাদেশে এই ‘ইঁদুর মারার বিষ’, ‘গ্যাস ট্যাবলেট’, ‘তেলাপোকার যম’ নানা নামে শহরের অলিগলিতে এই বিষ বিক্রি হয়। ‘কুইকফস’, ‘সালফস’ কিংবা ‘সেলফস’ নামে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয় মুদিদোকান থেকে শুরু করে বালাইনাশক বিক্রয়কেন্দ্রে। এটি কতটা প্রাণসংহারী ও বিপজ্জনক এবং কীভাবে এর ব্যবহার করতে হয়, তা নিয়ে আমাদের জানা-বোঝা একেবারেই কম। তবে এই বিষ আমদানি, বিক্রি, মজুত বা ব্যবহারের অনুমোদন ও বৈধতা কিন্তু রাষ্ট্রই দিয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি বিভাগ, ভ্রাম্যমাণ আদালত, স্থানীয় সরকার, বাজার কমিটি যারা কোনো বাজারে দোকানে কী বিক্রি হয়, কেন হয় এসব দেখভাল করে, তারা দেশজুড়ে বালাইনাশক বিক্রি-ব্যবহারের ক্ষেত্রে চরম মাত্রায় উদাসীন। একই সঙ্গে দায়িত্বশীল নয় এবং এমনকি নিষিদ্ধ বালাইনাশক কেন বিক্রি ও ব্যবহৃত হচ্ছে, সে বিষয়েও কোনো দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অপারগ। আর কর্তৃপক্ষের এই রহস্যজনক নিশ্চুপতা, অবহেলা কিংবা নানামুখী বাণিজ্যস্বার্থের কারণে দেশজুড়ে মাটি, পানি, বাতাস থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মক প্রাণসংহারী বালাইনাশক বিষ। একই সঙ্গে শহর এলাকায় ‘পেস্ট কন্ট্রোলের’ নামে প্রাণঘাতী বালাইনাশকের ব্যবহার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। তবে যে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড নিয়ে আমরা আলাপ শুরু করেছি, জানা যাচ্ছে, এই প্রাণঘাতী বিষ আমাদের খাবারে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষ করে আমরা সবচেয়ে বেশি যে খাদ্য গ্রহণ করি ভাত, সেই চালে।


‘চালের পোকা মারার ট্যাবলেটে স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শিরোনামে একটি সরেজমিন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক আজকের পত্রিকা। প্রতিবেদনটি জানায়, চালের পোকা দমনে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইডের যথেচ্ছ ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে (সূত্র: ৩ /৪ / ২৪)। ডাল, সুজি, গম ও শাক-সবজিতেও এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গুদামে খাদ্যশস্য পোকামুক্ত রাখতে নিয়ম মেনে এটি ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে গুদাম, পাইকারি ও খুচরা দোকান সর্বত্র এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি চালের বস্তায়ও ব্যবহৃত হচ্ছে এই বিষ। প্রতিবেদনমতে, গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে শহরের মুদিদোকানেও বিক্রি হচ্ছে এই ভয়াবহ বিষ। ঢাকার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, বাবুবাজার, বাদামতলী, কারওয়ান বাজারের চালের আড়তে এবং বনশ্রী, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকার মুদিদোকানেও চালের বস্তার পোকা মারতে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহারের কথা গণমাধ্যমকে জানান ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। কোনো চালের বস্তায় পোকা দেখা গেলে একটি ট্যাবলেট দিয়ে এক দিন ঢেকে রাখা হয়। এরপর পোকা মরে গেলে চাল বিক্রি করা হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও