‘আইন সবার জন্য সমান’ বনাম একটি ‘বেআইনি’ ব্যাখ্যা
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গত দুটি নির্বাচন নিয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল। ফলে এবারের নির্বাচনেও তেমনটা ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল। তবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণের পর অনেকের মনে আশা জেগেছিল, এ নির্বাচনে এমন কিছু হবে না, যাতে সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবীদের সম্মান ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। যাঁরা নিজেদের আইনজীবীদের প্রতিনিধি বা নেতা হিসেবে দাবি করেন, তাঁরা বোধ হয় এবার দলীয় ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারবেন।
কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। যা হয়েছে, সেটাকে বরং আগের দুবারের চেয়ে আরও বেশি অনভিপ্রেত ও অপ্রীতিকর বলা যায়। আইনজীবীদের জন্যও এ ঘটনাগুলো আরও বেশি অসম্মানজনক হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তাতে এই প্রশ্নও সামনে এসেছে, ‘আইন সবার জন্য সমান’ নাকি ক্ষমতাবানদের জন্য ভিন্ন?
ভোট গণনা নিয়ে মতবিরোধ ও হামলা
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে গত কয়েকবারের মতো এ বছরও প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সাদা প্যানেল (বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ–সমর্থিত) ও নীল প্যানেল (জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল–সমর্থিত)। তবে এবার আওয়ামী ঘরানার প্রভাবশালী আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুথী সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে ‘ভিন্ন মাত্রা’ যুক্ত হয়। তিনি আইনজীবী সমিতির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের স্ত্রী।
৬-৭ মার্চ অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই শেষ হয়েছিল। ৭ মার্চ রাতে ভোট বাছাই করা হয়। এ সময় কোনো কোনো প্রার্থী ব্যালটের সঙ্গে মুড়ির মিল না থাকার কথা উল্লেখ করে আপত্তি জানান। এরপর ভোট গণনা শুরু করা নিয়ে মতিবিরোধ দেখা দেয়।
এই মতবিরোধের সূত্র ধরে ৮ মার্চ ভোরে আইনজীবী সমিতি ভবনের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক অরাজকতা চালানোর অভিযোগ ওঠে নাহিদ সুলতানা যুথীর সমর্থক কয়েকজন আইনজীবী এবং বহিরাগত যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। তাঁরা আওয়ামী লীগের সমর্থক একাধিক আইনজীবীকে বেধড়ক মারপিট করেন বলেও জানা যায়। এরপর তাঁরা নাহিদ সুলতানা যুথীকে সম্পাদক হিসেবে জয়ী ঘোষণা করতে নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ককে বাধ্য করেন, এমন অভিযোগও আমরা দেখি।
মামলার প্রধান আসামি ‘অধরা’
অবস্থাদৃষ্টে এটা স্পষ্ট, ক্ষমতাসীন সরকারেরই সমর্থক দুটি পক্ষের বিরোধের ফলেই ৮ মার্চ আইনজীবীরা মারধরের শিকার হন। এ ঘটনা নিয়ে হত্যাচেষ্টার যে মামলা করা হয়, তাতে নাহিদ সুলতানা যুথীকে (১ নম্বর আসামি) এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। ঘটনার সঙ্গে দৃশ্যমান কোনো সংযোগ না থাকলেও নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুসসহ (কাজল) বিএনপি–সমর্থিত একাধিক আইনজীবীকেও একই মামলায় আসামি করা হয়।
এ মামলায় ৮ মার্চ রাতে পাঁচ আইনজীবীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিন দিনের রিমান্ড শেষে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এরপর ৯ মার্চ রুহুল কুদ্দুসকে (২ নম্বর আসামি) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চার দিনের রিমান্ড শেষে তাঁকেও কারাগারে যেতে হয়েছিল।