মেট্রোরেলে স্বাচ্ছন্দ্য, শূন্য জবাবদিহিতা

সমকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন মাহবুব আজীজ প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৪, ১৯:০৪

রাজধানীর গণপরিবহনে, বলবার মতো, রীতিমতো এক বিপ্লবের সূচনা হয়েছে– মেট্রোরেল। উত্তরা থেকে মতিঝিল যে সময়ে সাধারণ মানুষ মেট্রোরেলে পৌঁছে যাচ্ছে, তা সত্যিই স্বপ্নের মতো। সরকারি মেগা প্রকল্পের মধ্যে নিঃসন্দেহে মেট্রোরেল অন্যতম জনবান্ধব, আরেক মেগা প্রকল্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অবশ্য সাধারণ মানুষের উপকারে এসেছে, বলা যাবে না। ক’জনের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে এ শহরে? অধিকাংশ বাসেই চলাচল করেন, সেই লক্কড়মার্কা বাস ১৬০ টাকা টোল দিয়ে এক্সপ্রেসওয়ে পার হতে অনাগ্রহী, আর বিআরটিসি বাস চালু হলেও, সেটি সরাসরি উত্তরা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যাওয়া-আসা করে বলে মাঝবর্তী স্থানের যাত্রীরা এর সুফল পান না। সেই তুলনায় মেট্রোরেল অবশ্যই সাধারণ মানুষের দুঃসহ যানজট যন্ত্রণার কবল থেকে মুক্তির দূত হয়ে দেখা দিয়েছে, বলা যায়। ছিমছাম, পরিষ্কার, ঝকঝকে মেট্রো স্টেশনে নিয়ম মানা সারি সারি মানুষ– নির্বিরোধ, সহযোগিতাপরায়ণ; দেখতেও ভালো লাগে। 


অবশ্য মেট্রোরেল কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মতিঝিল বা মিরপুরবাসীর জন্য যতখানি মুক্তির দূত হয়ে এসেছে, উত্তরাবাসীর জন্য একেবারেই ততটা নয়। জানা ছিল, উত্তরা উত্তর অর্থাৎ দিয়াবাড়ী থেকে বিআরটিসির শাটল দোতলা বাসে মূল উত্তরা শহর অর্থাৎ হাউস বিল্ডিং, রাজলক্ষ্মী বা এয়ারপোর্টের প্রধান সড়কের দিকে আসা যায়। গত সপ্তাহে অফিস শেষে অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে কারওয়ান বাজার থেকে মেট্রোরেলে চেপে শেষ স্টেশন দিয়াবাড়ীর ‘উত্তরা উত্তরে’ যখন নামি, তখন রাত ৯টা। প্রায় বিরানভূমি সেই স্টেশনে তখন বিআরটিসির বাস দূরে থাক, সাধারণ বাস, অটোরিকশা কিছুই মেলে না। দেখা যায়, কিছু হিউম্যান হলার আসে, যেগুলো লেগুনা নামে পরিচিতি, জনপ্রতি ২০ টাকায় সেগুলো হাউস বিল্ডিংয়ে যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছে! দিয়াবাড়ী নিশ্চয়ই মূল উত্তরা থেকে অনেক দূর, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে পরদিন রাতে তার আগের স্টেশন উত্তরা সেন্টারে নেমে যাই। ঈশ্বর রক্ষা করুন!– স্টেশনে নামবার পর এই কথা বলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না, সেটি এমনই এক জনবিরল স্থানে তৈরি স্টেশন। সেখান থেকে অটোরিকশায় দিয়াবাড়ী মেট্রো স্টেশনে এসে অতঃপর পরবর্তী ব্যবস্থা করতে হয়! আর উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন! এর পরদিন উত্তরা দক্ষিণ মেট্রো স্টেশনে নেমে ‘কিংকর্তব্যবিমূঢ়’ শব্দটির সঠিক অর্থ বুঝতে পারি! এটি এমন এক স্থানে তৈরি, রাত ৯টা মানে সেখানে মধ্যরাত, যার সামনে পেছনে সেই অর্থে কোনো রাস্তাই নাই, যে রাস্তা নিকটবর্তী, তা উত্তরা সেন্টার স্টেশনের দিকে। এর মানে হলো– উত্তরায় তিনটি মেট্রো রেলস্টেশনই দিয়াবাড়ী থেকে মিরপুর ডিওএইচএস বরাবর পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে মূল উত্তরা শহরের দিকে রওনা, সোজা বাংলায়– ঝঞ্ঝাবহুল যাত্রা! উত্তরার যে কোনো মেট্রো স্টেশনে নামলেই বোঝা যায়, ১৮ নম্বর সেক্টর থেকে ১৪ নম্বর সেক্টর পর্যন্ত বিরান এলাকা ঘিরে তৈরি হয়েছে এগুলো– সম্ভবত ভবিষ্যৎ উত্তরার আবাসভূমি লক্ষ্য রেখে; কিন্তু বর্তমানে মেট্রোরেলে গতিময় নির্বিঘ্ন ভ্রমণ শেষে উত্তরার যে কোনো একটি মেট্রো স্টেশনে নামা মানে রীতিমতো ‘স্বর্গ থেকে পতন’! আব্দুল্লাহপুরে একটি মেট্রোরেল স্টেশন করা যায় না? আরেকটি রাজলক্ষ্মী বা এয়ারপোর্ট বরাবর? এতখানিই যখন হলো, আর কিছুটা এগিয়ে গেলেই মূল উত্তরাবাসীর জীবন আরও অনেক সহজ হয়ে যায়!


তারপরও যতটুকু হয়েছে মন্দ নয়, ভেবে ১৪ মার্চ, বৃহস্পতিবার আবারও মেট্রোরেলে চেপে উত্তরা দিয়াবাড়ী স্টেশনে নামি। রাত তখন ৯টা বলে, যথারীতি বিআরটিসি শাটল বাস আর নাই। লেগুনার গাদাগাদি ভিড়ে উঠতে ইচ্ছে হয় না বলে হাঁটতে হাঁটতে জমজম টাওয়ারের কাছাকাছি পৌঁছে চোখ যায় ২৮ নম্বর সোনারগাঁ জনপথের ৬ তলা ভবনের দিকে। সুরম্য ভবনটির ৫ তলায় কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁ। মানুষের ভিড়ে গমগম করছে। বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টের শাখা এটি। 


২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট যে ভবনে অবস্থিত, সেই গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর দেশজুড়ে শোক, ক্ষোভের কথা আমরা জানি। কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টটিতে পুড়ে অঙ্গার হয় বহু মানুষ। ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতের অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর পর ৩ ও ৪ মার্চ শুরু হয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অভিযান। আরও ছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যায়, ডিএমপি এই ১০ দিনে ১ হাজার ১৩২টি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে। রাজউক ৩৩টি ভবনে অভিযান চালিয়ে সাড়ে ৪৮ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দুটি ভবন ও দুটি রেস্তোরাঁ সিলগালা করে ৭ প্রতিষ্ঠানকে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ২২টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে, যার পরিমাণ ৬ লাখ ১৮ হাজার টাকা। রাজধানীজুড়ে শত শত রেস্তোরাঁ ও ভবনে সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন অভিযানের সমালোচনামুখর প্রতিবেদন আমরা পত্রিকায় দেখি, রেস্তোরাঁ মালিকদের সংগঠনের প্রতিবাদ চোখে পড়ে। আমরা জানতে পারি, বেইলি রোডে আগুনের ঘটনায় গঠিত ফায়ার সার্ভিস ও রাজউকের দুটি তদন্ত কমিটির একটিও তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়নি। ফায়ার সার্ভিস কমিটিকে দ্রুততম সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল। রাজউকের তদন্ত কমিটিকে ৭ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়, যা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও