প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা কি শুধু ঘোষণায়ই সার?

বণিক বার্তা আবু তাহের খান প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার দৃষ্টিকোণ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে সরকার ১৯৯৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ২৫ বছরে পাঁচ দফায় দেশের মোট ১৩টি এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করেছে। উল্লিখিত ১৩টি এলাকা হচ্ছে সুন্দরবন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ, সোনাদিয়া দ্বীপ, হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, মারজাত বাঁওড়, বুড়িগঙ্গা নদী, শীতলক্ষ্যা নদী, বালু নদ, গুলশান-বারিধারা লেক ও জাফলং-ডাউকি নদী। এর বাইরে চলনবিল ও হালতি বিলকেও সম্প্রতি ইসিএ-ভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। উল্লেখ্য, কোনো একটি এলাকাকে ইসিএ-ভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, সে এলাকাকে ঝুঁকিতে থাকা বিপন্ন দশা থেকে রক্ষাকল্পে বিশেষ অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। কিন্তু চরম দুর্ভাগ্য ও হতাশার বিষয় এই যে ইসিএ হিসেবে ঘোষণার পরও ওই এলাকাগুলোর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য পরিস্থিতির অবনতিরোধ প্রবণতা থামা তো দূরের কথা, উল্টো সেসবের অবনতির মাত্রা আরো বেড়ে চলেছে। আর তার চেয়েও বেশি হতাশার বিষয় হলো, এই বেড়ে যাওয়ার পেছনে ব্যক্তি বা বেসরকারি খাতের ভূমিকার চেয়েও অধিক আগ্রাসী ভূমিকায় রয়েছে রাষ্ট্র নিজেই। 


সরকার ১৯৯৯ সালে যখন সুন্দরবনকে ইসিএ হিসেবে ঘোষণা করে, তখন এর আয়তন ছিল ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। এরও আগে ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেস্কো) এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। আর এ উভয়বিধ ঘোষণার ফলে ধারণা করা হয়েছিল যে সুন্দরবন শুধু রক্ষাই পাবে না, এর বিশাল বিস্তৃত বনভূমি, বন পরিবেষ্টিত নদ-নদী ও কলকাকলীময় জীববৈচিত্র্য আবার তার হৃত সমৃদ্ধি ও গৌরব ফিরে পাবে। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হওয়া তো দূরের কথা, সুন্দরবনকে ইসিএ ঘোষণার এক যুগ পেরোনোর আগেই সরকার সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকায় কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র (রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র) স্থাপনের জন্য ২০১০ সালে ভারত সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে বসে (স্বাক্ষরকারী সংস্থা ছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার করপোরেশন)। আর তারই ধারাবাহিকতায় সংকটাপন্ন সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জেনেও এমওইউ অনুযায়ী, ২০১৬ সালেই রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থাপন কাজ শুরু করা হয়। 


এদিকে ১৯৯৯ সালে সুন্দরবনকে ইসিএ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাভাবিকভাবেই তখন থেকে এর গাছপালা, নদ-নদী ও প্রাণিকুলের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাড়তি যত্ন, নজর, নিরাপত্তা ও পরিচর্যা নিশ্চিত করার কথা ছিল, যাতে সেগুলো আবার পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র সেটি করতে শুধু ব্যর্থই হয়নি, উল্টো পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যকে বাড়তি হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে এ ধরনের নতুন ক্রিয়াকর্মও শুরু করে দিয়েছে, যার মধ্যে সুন্দরবনের ভেতরে ও সংলগ্ন এলাকায় অবৈধভাবে বহুসংখ্যক শিল্প-কারখানা স্থাপনের অনুমতিদান অন্যতম। কিন্তু যখন দেখা গেল যে বিষয়টি আইনের বরখেলাপ এবং এরই মধ্যে তা আদালতের নজরে চলে এসেছে, তখন রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক উদ্যোগ নেয়া হলো সুন্দরবনের ইসিএ সন্নিহিত এলাকা থেকে ১০ কিলোমিটার ছেঁটে ফেলা। কী ভয়ংকর উদ্যোগ! রাষ্ট্র যেখানে অবৈধ দখলদারদের উৎখাত বা নিয়ন্ত্রণ করবে, সেখানে উল্টো তারা নিজেরাই দখলদারদের রক্ষার জন্য সুন্দরবনকে ছেঁটে ফেলতে চাচ্ছে। এমনটি বোধহয় কেবল বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রের পক্ষেই সম্ভব, যেখানে জনগণের কাছে রাষ্ট্রের বিন্দুমাত্র কোনো জবাবদিহিতা নেই।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও