রেস্টুরেন্টে অভিযান কি লোক দেখানো?
কাজ আর খাওয়া ছাড়া জনগণে ঠাসা এই নগরে করার কিছু নেই। বিনোদন তো দূরের কথা, আপনি একটু খোলা হাওয়ায় বসবেন, কোথায় বসবেন? হন্যে হয়ে খুঁজলেও সেই জায়গা মেলা ভার। দুই-চারটা যে উদ্যান আছে বেলা ডোবার সাথে সাথে তাও ডুবে যায়।
এই শহরের বিষণ্ন মানুষ তাই বিনোদন খুঁজে নিয়েছে রেস্টুরেন্টে। আসলে ঠিক খাওয়া নয়, টাকার বিনিময়ে খাবার খাওয়ার নামে ঐ জায়গাটুকুই আধ বা এক ঘণ্টার জন্য ভাড়া নেন তারা। নইলে যে রেস্টুরেন্টে বসলেই পকেট থেকে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা নাই হয়ে যাবে সেইখানে এই দুর্মূল্যের সময়ে কে যায় শখ করে? তো, ব্যবসায়ীরাও বুঝে গেছেন। ছোট জায়গায় বসার একটু সুযোগ করে দিতে পারলেই লাভজনক ব্যবসা। আর সেই রেস্টুরেন্টে যদি থাকে ছবি তোলার মতো কোনো কর্নার তবে তো কথায় নেই। লাভে লাভ।
সেই লাভ পেতে অসংখ্য রেস্তোরাঁ এখন নগর জুড়ে। রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি বলছে, কেবল ঢাকাতেই এখন খাবার দোকান বা রেস্টুরেন্টের সংখ্যা ৪ লাখ ৮১ হাজার। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক তো বটেই। পাড়া মহল্লায় পুরোনো দোকান উঠিয়ে বা ভাড়া বাড়িতে তৈরি হচ্ছে রেস্টুরেন্ট, ক্যাফে ও ফাস্টফুড শপ।
তা নিয়ে কারও কোনো সমস্যা নেই। সবাই সানন্দে মেনেছেন, কিন্তু খেতে গিয়ে যখন ৪৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়, কেবল লেগে যাওয়া আগুনে ভবন থেকে বের হওয়ার রাস্তা না পেয়ে, তখন হয় সমস্যা। সমস্যাটা ছোট নয় বড়। জীবন-মৃত্যুর সমস্যা।
টনক নড়লো, সিদ্ধান্ত হলো বন্ধ করে দেওয়া হবে এমন হোটেল, রেস্তোরাঁ যা তৈরি করে রেখেছে মরণ ফাঁদ। সহমত। অবশ্যই সহমত। তবে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই পুলিশ, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন ঝাঁপিয়ে পড়লো এই ফাঁদ বন্ধ করতে, আলাদা আলাদাভাবে।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি একে ‘হায়েনা’র ঝাঁপিয়ে পড়ার সাথে তুলনা করছেন। কারণ কোনো সংস্থা অন্যদের সাথে কোনো পরিকল্পনা না করেই এই কাজ শুরু করেছে। নির্বিচারে চলছে ভাঙচুর আর উচ্ছেদ। উচ্ছেদ অভিযান চলছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- রেস্টুরেন্ট
- অভিযান