সাংস্কৃতিক বহুত্বেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ

বণিক বার্তা আহমেদ দীন রুমি প্রকাশিত: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৫৫

পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম আইনমন্ত্রী হয়েছিলেন বরিশালের যোগেন মণ্ডল। তাকে বিবেচনা করা হয় পাকিস্তানের স্থপতিদের একজন। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। কিন্তু জিন্নাহর মৃত্যুর পরই বদলে গেল ক্ষমতার সমীকরণ। মুসলিম আমলাতান্ত্রিক আধিপত্যে তিনি মনোযোগের কেন্দ্রে থাকতে পারলেন না। অল্প সময়ের মধ্যেই খসে পড়েন সরকার থেকে। হাল আমলে বরিশালের যোগেন মণ্ডলের কথা খুব কম মানুষই জানে। কিন্তু যোগেন মণ্ডলের গল্পেই পাকিস্তানের গল্প নিহিত। পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল ভারতে সংখ্যালঘু নিরাপদ নয়—এ অনুসিদ্ধান্তকে মাথায় নিয়ে। কিন্তু ক্রমে পাকিস্তান নিজেই যেন এমন রাষ্ট্রে পরিণত হলো যেখানে সংখ্যালঘু নিরাপদ নয়। অর্থাৎ পাকিস্তান তার জন্মের পাটাতনকেই নাকচ করে দিল। এই যে ভিন্ন মতবাদকে নাকচ ও বাতিল করার নীতি, এটাই এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের ভঙ্গুরতার পেছনে অন্যতম অনুঘটক। অবশ্য কথাটা শুধু পাকিস্তান না, যেকোনো দেশের জন্যই প্রযোজ্য। ক্ষমতা দিয়ে বিজয় অর্জন করা যায় সত্য, কিন্তু স্থিতিশীলতার জন্য বহুত্ববাদী মনোভঙ্গি জরুরি। কেবল চেঙ্গিস খানের মতো জয় করে যাওয়াই তো সভ্যতার মূল কথা নয়। সভ্যতা প্রতিষ্ঠার মূল সূত্র বহুত্বকে ধারণ করতে পারার মধ্য দিয়ে চিন্তার ঝুলি সমৃদ্ধ করা।


সাংস্কৃতিক আধিপত্য বা কালচারাল হেজেমনির এ যুগে সংস্কৃতির বহুত্বের আলাপ যথেষ্ট দুর্লভ ও দুর্বোধ্য। অথচ পরিচয়ের বহুত্ববাদী সংজ্ঞায় অমর্ত্য সেন বৈচিত্র্যের সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নৈতিক ও আইনি পরিসর জোগান দেয়ার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। সামাজিক-সাংস্কৃতিক গতিময়তার কারণেই তাতে বৈচিত্র্যের সমাবেশ দেখা যায়। পেশা, অর্থনৈতিক অবস্থা, ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা, লিঙ্গ, ভাবাদর্শ ও নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য থাকে। বৈচিত্র্য থাকতে পারে সমাজে বসবাসকারী মানুষ কিংবা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে। বিদ্যমান সে বহুত্বকে কীভাবে ধারণ করা হবে, সেটা সবার আগে বিবেচ্য। কারণ সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের সর্বোচ্চ ভালো কামনা করার জরুরত যেমন সত্য, পাশাপাশি সত্য কম সংখ্যক উপেক্ষিত মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করা ও অধিকারবঞ্চিত হওয়া থেকে সুরক্ষিত রাখা। লিঙ্গ, ধর্ম, বর্ণ কিংবা জাতীয়তার ভিত্তিতে মানুষ তার মানবিক মর্যাদা হারায় না। যদি কোনো রাষ্ট্র কোনো বিশেষ শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের প্রতি পিঠ প্রদর্শন করে, তাহলে সেই বিশেষ শ্রেণী বা সম্প্রদায়ের থেকে আনুগত্য দাবি করতে পারে না। যদি দাবি করে, তাহলে সেটা আর আধুনিক শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক থাকে না। আদিম যুগের দাস ও মুনিবের সম্পর্কে পরিণত হয়। 


আরেকটা জরুরি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। চতুর্দশ শতাব্দীর সমাজবিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন আসাবিয়া তত্ত্বের কারণে খ্যাতি অর্জন করেছেন। তিনি তার কিতাবুল ইবারের ভূমিকা পর্বে তথা মুকাদ্দিমায় যুদ্ধনীতি নিয়ে একটা ধারণা দিয়েছেন। আসাবিয়া মানে গোত্রীয় বন্ধন। এর বন্ধন রক্তের মাধ্যমে হতে পারে কিংবা আদর্শের মাধ্যমে। ইবনে খালদুনের দাবি ছিল, যুদ্ধের সময় সে পক্ষে আসাবিয়া শক্তিশালী থাকে, সে পক্ষে জয়ের সম্ভাবনা বেশি। কারণ কয়েকটা গোত্র যখন মৈত্রীর মাধ্যমে একটা পক্ষ হিসেবে যুদ্ধ করে তখন তাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করা সহজ। বিপরীতে একই গোত্রের হলে বিভাজন তৈরি করাটা এত সহজ না। ইবনে খালদুন অনেক দিক থেকেই প্রাসঙ্গিক এখনো। কিন্তু জাতীয়তাবাদ পরবর্তী সময়ে আসাবিয়ায় প্রভাবিত যুদ্ধনীতির বিপরীত উদাহরণও তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ যখন একাধিক জাতিগোষ্ঠী ও বর্ণের মানুষ একটা সাধারণ পাটাতন তৈরি করে, সে পাটাতনের প্রতি অন্য জাতিগোষ্ঠীর আস্থা বেড়ে যায়। বহুত্ববাদী সমাজের প্রতি প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষও ভরসা রাখে। ভারতের ক্ষেত্রে ঠিক এটাই হয়েছে। বর্তমান প্রান্তিক নীতির কথা বাদ দিলে ভারত কোনো না কোনোভাবে সাংস্কৃতিক বহুত্বকে ধারণ করে এসেছে ইতিহাসের দীর্ঘ সময় ধরে। গ্রিক, পর্তুগিজ, আরমেনীয়, আফগান, আরব ও পারসিকদের মতো অজস্র জাতিগোষ্ঠীর বাস। এ সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জন্য দেশ হিসেবে অনেকটাই স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পেরেছে পরবর্তী সময়ে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকিস্তান ব্যস্ত ছিল নাকচ করার প্রবণতায়, বিপরীতে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় তৃষ্ণা ছিল বহুত্ববাদের। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও