এডিস মশা দমনে জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা

বণিক বার্তা ড. মো. গোলাম ছারোয়ার প্রকাশিত: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৮

ডেঙ্গু সংক্রমণ ও মৃত্যুর জন্য ২০২৩ সাল ছিল একটি কালো বছর। ২০০০ থেকে ২০২২ সাল। এ ২২ বছরে ডেঙ্গুতে যে আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে তা এক বছরেই ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গুর তাণ্ডবে রেকর্ড প্রাণহানির বছর পেরিয়ে আমরা নতুন বছরে পা রেখেছি। আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয় হলো, ডেঙ্গু ভাইরাস ও বাহক ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। ২০২৩ সালে এডিস লার্ভার যে ঘনত্ব দেখা গেছে তার চেয়ে ২০২৪ সালে ডেঙ্গুর চোখ রাঙানি ২০২৩ সালের তুলনায় আরো ভয়াবহতার আভাস দিচ্ছে। যার নমুনা ৯ ফেব্রুয়ারিতেই দেখা গেল। ২০২৩ সালের শুরু থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত ছিল ৬২৮ জন। ২০২৪ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত ১২০২ জন, যা ২০২৩ সালের দ্বিগুণের কাছাকাছি। একইভাবে ২০২৩ সালে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছিল আটজন। আর ২০২৪ তা ১৬ জন, যা স্পষ্টভাবে দ্বিগুণ। অথচ ২০২৩ সালে একই সময় পর্যন্ত আবহাওয়া ২০২৪ সালের তুলনায় ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বংশবিস্তারের পক্ষে ছিল।


সবকিছু বিবেচনায় ২০২৪ সাল সত্যিই ডেঙ্গুর জন্য এক অজানা ভয়ংকর পরিস্থিতির আভাস দিচ্ছে। তাহলে আমাদের করণীয় কোন পথে। বিগত বছরগুলোয় ব্যবহৃত ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার দমন পদ্ধতির উন্নয়নকল্পে তাই আশু ব্যবস্থা প্রয়োজন। আগের অবস্থার উন্নয়নের জন্য সবার আগে যে ব্যবস্থাপনার কথা বলতে হয় তাহলো জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা। কারণ এডিস মশাকে দমন করতে হলে অবশ্যই মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। প্রজননস্থল ধ্বংস বলতে বোঝায়, যে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার বংশ বিস্তার করার সম্ভাবনা আছে তা অবশ্যই নির্মূল করতে হবে। যেসব কনটেইনার পানি ধারণ করে তা যেন কোনোভাবেই অরক্ষিতভাবে মশা জন্মানোর আধার হতে না পারে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একইভাবে যেসব জলাধার ধ্বংস করা সম্ভব নয় সেগুলো অবশ্যই যথাযথ ট্রিটমেন্টের আওতায় আনতে হবে। অর্থাৎ প্রয়োজনীয় লার্ভিসাইড প্রয়োগের মাধ্যমে লার্ভা ধ্বংস নিশ্চিত করতে হবে। এখন এই লার্ভিসাইড প্রয়োগ পদ্ধতি অবশ্যই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে হতে হবে। অর্থাৎ লার্ভিসাইডের নির্বাচন থেকে শুরু করে প্রয়োগের প্রতিটি ধাপ হতে হবে বিশেষজ্ঞদের পূর্ণ তত্ত্বাবধানে। এ কীটনাশক তখনই যথাযথভাবে কাজ করবে যখন উপযুক্ত লিথাল ডোজে মশার শরীরের নির্দিষ্ট স্থানে ক্রিয়াশীল হবে। একটু ভালো করে বললে, এলডি-৫০ মান বা এলসি-৫০ মানের উপযুক্ততা যাতে সংরক্ষিত হয় সেদিকে গভীর দৃষ্টি দিতে হবে। এজন্য যেমন প্রয়োজন হবে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞের তেমনিভাবে প্রয়োজন হয় স্থানীয় আবাসিক এলাকার বসবাসরত ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা।


গবেষণায় দেখা যায়, যেসব মশকী মানুষের বসবাসের অতি সন্নিকটে মিলিত হয় এবং ডিম পাড়ে তাদের ডিমের সজীবতা মানুষের বসবাসের বাইরে মিলিত হওয়ার ডিমের সজীবতার চেয়ে অনেক গুণ বেশি। এতে করে এটা বুঝতে কষ্ট হওয়ার কথা নয় যে ডিমের সজীবতার জন্য মানুষের রক্তের প্রোটিন কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ রক্তশোষণকারী ঘাতক মশকীকে কোনোভাবেই নিজের আবাসস্থলে বংশ বিস্তার করতে দেয়া যাবে না। নিজের বাসার মধ্যে যদি এ পরম শত্রু বিনা বাধায় বংশ বিস্তার এবং রক্ত শোষণ করার কোনো ব্যবস্থা তৈরি হয় তা সরকার বা স্থানীয় সরকারের কোনো ইউনিটের লোক এসে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। ব্যবস্থা নিতে হবে বসবাসকারীর নিজেকে। এর মানে সর্বপ্রথম সচেতনতা তৈরি করতে হবে নিজের মধ্যে। মনে করা প্রয়োজন, আমার আবাস্থল শত্রুমুক্ত করার দায়িত্ব আমার নিজের। বাড়ির বাইরের চারদিকে যেসব মশা জন্মানোর স্থান আছে সেগুলো স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি জোরালোভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে। কিন্তু নিজের বাড়ির ব্যবস্থাপনা অবশ্যই নিজেকে নিশ্চিত করতে হবে। তাই শত্রুর অত্যন্ত পরিচিত আবাসস্থল অর্থাৎ অরক্ষিত জমানো পানির অপসারণে জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততার কোনো বিকল্প নেই। এ তো গেল লার্ভা ধ্বংসের বৃত্তান্ত। একইভাবে পূর্ণাঙ্গ মশার ধ্বংসেও জনসচেতনতা ও সম্পৃক্ততা কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বলছি। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও