জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণ: প্রাসঙ্গিক ভাবনা
৩০ জানুয়ারি ২০২৪। শুরু হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদের পথচলা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতীয় সংসদে তাঁর প্রথম ভাষণটি দিলেন। যে ভাষণে তিনি সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন তুলে ধরেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত আমাদের বাংলাদেশকে চলতে হচ্ছে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে। এ দেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে বারবার বিঘ্নিত করার দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র বরাবরই তৎপর। এবারের নির্বাচন-পূর্ববর্তী কয়েক মাস ধরে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এবং সরকারের বিরুদ্ধে লাগামহীন গুজব রটনা দেশে একধরনের বিপদের আশঙ্কা তৈরি করেছিল। নির্বাচনের দুই দিন আগে ঢাকায় বেনাপোল এক্সপ্রেস পুড়িয়ে দেওয়া প্রমাণ করে, দেশবিরোধী শক্তি কতটা তৎপর ও বেপরোয়া ছিল। এমন অবস্থায় শান্তিপূর্ণ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেশবাসীকে যেমন আশ্বস্ত করেছে, পাশাপাশি বিশ্বের রাজনৈতিক মহলকে করেছে চমৎকৃত। এই ভোট থেকে একটা কথা বিশেষভাবেই প্রমাণ হয়েছে, দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।
গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠানের সফলতার জন্য মহান জাতীয় সংসদের ভাষণে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যথার্থই বলেছেন, ‘দেশের গণতন্ত্রের জন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন অত্যন্ত যুগান্তকারী ঘটনা, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় হয়েছে দেশের জনগণের, জয় হয়েছে গণতন্ত্রের।’
এই নির্বাচনের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে দেশবাসীর সাধারণ ইচ্ছা। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাঁর বক্তব্যে যথার্থই বলেছেন, ‘নির্বাচন ঘিরে একটি মহল সহিংসতা ও সংঘাতের সৃষ্টি করে গণতন্ত্রের যাত্রাপথে বাধা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছিল। তাদের গণতন্ত্রবিরোধী ও সহিংস কর্মকাণ্ড সাময়িকভাবে জনগণকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রাখলেও গণতন্ত্রের শাণিত চেতনা ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত রাখতে পারেনি। সাধারণ মানুষের ব্যাপক আগ্রহ ও সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্যই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সব পদক্ষেপ সার্থক হয়েছে। নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে।’
ধ্বংসাত্মক রাজনীতি, নেতিবাচক রাজনীতির প্রতি সতর্কবাণী উচ্চারণ করে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে বলেছেন, ‘ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমাল ও জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি সরকারি দলকেও বিরোধী দলের প্রতি দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সরকারও এ ক্ষেত্রে সংযত আচরণ করবে, এটাই সবার প্রত্যাশা। মহামান্য রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার সার্থকতা এখানে নিহিত রয়েছে।