আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার একটি পর্যালোচনা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচনি ইশতেহার-২০২৪ ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২৭ ডিসেম্বর দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ : উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ স্লোগানসংবলিত ইশতেহারটিতে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, জনকল্যাণমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা গড়ে তোলা, শিক্ষার উন্নয়ন, দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো, দারিদ্র্যবিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস করা, নিম্ন-আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা, ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা চালু করা, গণতান্ত্রিক চর্চার প্রসার ঘটানো, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা, শ্রমিক কল্যাণ, সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা ইত্যাদি বিষয় স্থান পেয়েছে।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে নবম (ডিসেম্বর ২০০৮), দশম (জানুয়ারি ২০১৪) ও একাদশ (ডিসেম্বর ২০১৮) সংসদ নির্বাচনেও ইশতেহার প্রকাশ করেছিল আওয়ামী লীগ। ওইসব ইশতেহারের অনেক বিষয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনি ইশতেহারে স্থান পেয়েছে। এ ইশতেহারের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যাক।
দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হলে আওয়ামী লীগ দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনি ইশতেহারে আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুত সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে দ্রব্যমূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা ছিল একটি। এতে বলা হয়, দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। অথচ ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার দুই অর্থবছর পার হতে না হতেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ১১.১১ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১১.৫২ শতাংশে দাঁড়ায় (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১২)। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমানে ধস, আমদানিনির্ভর দ্বিতীয় খাদ্যশস্য গমের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি, নিম্নমুখী রেমিট্যান্স, ‘জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা’ ইত্যাদি কারণে দ্রব্যমূল্যের চলমান ঊর্ধ্বগতি (নভেম্বরে ১০.৭৬ শতাংশ) আগামী দিনে হ্রাস পাবে না বৃদ্ধি পাবে, তা সময়ই বলে দেবে।
নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি : আওয়ামী লীগের ইশতেহার ২০২৪-এ বলা হয়েছে, নির্বাচিত হলে দেশের রূপান্তর ও উন্নয়নে আমরা তরুণ ও যুবসমাজকে সম্পৃক্ত রাখব। কর্মক্ষম, যোগ্য তরুণ ও যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্প্রসারণ, জেলা ও উপজেলায় ৩১ লাখ যুবকের প্রশিক্ষণ প্রদান এবং তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সহায়তা প্রদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সমীক্ষায় দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতিবছর ২ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় দেড় কোটি বেকারের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারে।