মার্কিন-পাকিস্তানি বন্ধুত্বের অবধারিত পরিণতি

যুগান্তর একেএম শাহনাওয়াজ প্রকাশিত: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:৩৭

মার্কিন নীতি হচ্ছে, যতদিন নিজ লক্ষ্য অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, ততদিন তারা বন্ধুত্ব বজায় রাখবে-সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে। স্বার্থ হাসিলের সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেলে আর ফিরে তাকাবে না। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে তেমনটিই ঘটেছিল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ডিসেম্বরে ঢাকায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়লে কঠিন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর আবেদনে আর সাড়া দেয়নি মার্কিন সরকার।


বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে পাকিস্তানের দুর্বল দশা স্পষ্ট হতে থাকে। যৌথবাহিনী বাংলাদেশের অনেকটা অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। কার্যত পাকিস্তানি বিমান ও নৌবাহিনী অকেজো হয়ে পড়েছিল।


এমন অবস্থায় নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ড. মালিক জেনারেল নিয়াজীকে গভর্নর হাউজে ডেকে পাঠান। এ সময় সেনাবাহিনীর প্রেস কর্মকর্তা প্রত্যক্ষদর্শী মেজর সিদ্দিক সালিকের বর্ণনায় পাকিস্তানি বাহিনীর একটি সংকটের চিত্র স্পষ্ট হয়। তিনি বলেন, নিয়াজী গভর্নরের সামনে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। পাকিস্তানি বাহিনীর দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে তিনি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠেন। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে গভর্নর জানান, তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে বার্তা পাঠাবেন যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে। পাকিস্তানি সামরিক অফিসাররাও অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছিলেন। নিজেদের জীবন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করতে থাকেন (আত্মসমর্পণের দলিল, মূল বই সিদ্দিক সালিক, Witness to Surrebder, মুক্তিযুদ্ধ আর্কাইভ, পৃ. ১৪১-১৪৪)।


পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রেক্ষাপট রচিত হয় ৯ ডিসেম্বর থেকেই। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা শত্রুমুক্ত হয়। অনেক শহরে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্যরা আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে আসছিল ঢাকার দিকে। এমন এক পরিস্থিতিতে ৯ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ড. এএম মালিক ইয়াহিয়া খানের কাছে একটি বার্তা পাঠান। অতিদ্রুত যুদ্ধ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। ইয়াহিয়া খান তখন দিশেহারা। তিনি গভর্নর মালিক ও সেনাপ্রধান নিয়াজী উভয়কেই তাদের বিবেচনামতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন। এ পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মার্ক হেনরি পাঁচ দফার একটি প্রস্তাব পাঠান। এগুলো হচ্ছে-১. অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে, ২. সামরিক বাহিনীর সদস্যদের পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে হবে, ৩. পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত অন্যসব নাগরিক যারা পশ্চিম পাকিস্তানে চলে যেতে ইচ্ছুক, তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে ফিরিয়ে নিতে হবে, ৪. ১৯৪৭ সাল থেকে যারা পূর্ব পাকিস্তানে বসবাস করছে, সেসব নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে এবং ৫. নিশ্চয়তা দিতে হবে তাদের কখনো দেশ থেকে বিতাড়িত করা হবে না।


তবে এ প্রস্তাব তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পেরেছে বলে মনে হয়নি। এদিকে গভর্নর মালিক পরবর্তী নির্দেশনার জন্য রাওয়ালপিন্ডির দিকে তাকিয়েছিলেন। অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ১৪ ডিসেম্বর দুপুর ১২টায় গভর্নর হাউজে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের একটি সভা ডাকেন। এ সংবাদ সকাল সাড়ে ৯টায় ভারতীয় বাহিনীর সিগন্যাল ইন্টিলিজেন্সের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লে. কর্নেল পি সি ভাল্লা পেয়ে যান। তিনি দ্রুত টেলিফোনে এয়ার ভাইস মার্শাল দেবাসেরকে জানান। তিনি শিলংয়ে অবস্থিত ইস্টার্ন এয়ার কমান্ডের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ছিলেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন, এ সময় গভর্নর হাউজে বিমান আক্রমণ করলে আত্মসমর্পণের বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সভায় কর্মকর্তারা যোগ দেওয়ার আগেই ভারতীয় বিমান থেকে গভর্নর হাউজে বেশ কয়েকটি বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। গভর্নর মালিক ভীত হয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় নেন। ১৩ বা ১৪ ডিসেম্বর রাতে নিয়াজী পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল হামিদকে অনুরোধ করেন, যাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যুদ্ধ বন্ধের পদক্ষেপ নেন। ১৪ ডিসেম্বর ইয়াহিয়া খান নিয়াজীর কাছে বার্তা পাঠিয়ে যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও