জাতিকে মেধাশূন্য করতে নেমে আসে নিষ্ঠুর আঘাত
১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে ঘৃণ্য কলঙ্কতম দিন। এক শোকাবহ দিন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় যখন সুনিশ্চিত, সমগ্র বাঙালি জাতি যখন বিজয় উদযাপনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে ঠিক তখনই বাঙালির ওপর আসে আরেকটি নিষ্ঠুর আঘাত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণির সব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। এই নৃশংস কাজে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সদস্যরা তাদের প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিল। কারণ তারা চেয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যেন তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারে। হিংসা ও প্রতিশোধপরায়ণ চিন্তা-চেতনা থেকে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছিল।
২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী’দের সংজ্ঞা চূড়ান্ত করা হয়। সংজ্ঞা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত সময়কালে যেসব বাঙালি সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক ও সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং এর ফলে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা ওই সময়ে চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী। চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয় এ হত্যাযজ্ঞ। পরে ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরে তাদের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর নিকট-আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের মৃতদেহ শনাক্ত করেন। অনেকের দেহে আঘাতের চিহ্ন, চোখ, হাত-পা বাঁধা, কারও কারও শরীরে একাধিক গুলি, অনেককে হত্যা করা হয়েছিল ধারালো অস্ত্র দিয়ে জবাই করে। হত্যার আগে তাদের নির্যাতন করা হয়েছিল সে তথ্যও বের হয়ে আসে। ২৫ মার্চ ’৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ’৭১ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন স্বনামধন্য বুদ্ধিজীবী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ হারান। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ড. মুনীর চৌধুরী, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ড. আনোয়ার পাশা, ড. আবুল খায়ের, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. সিরাজুল হক খান, ড. এএনএম ফাইজুল মাহী, হুমায়ুন কবীর, রাশিদুল হাসান, সাজিদুল হাসান, ফজলুর রহমান খান, এনএম মনিরুজ্জামান এ মুকতাদির, শরাফত আলী, এ আর কে খাদেম, অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য, এমএ সাদেক, এম সাদত আলী, সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, গিয়াসউদ্দিন আহমদ, এম মর্তুজা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. হবিবুর রহমান, ড. শ্রী সুখারঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইউম।