বাংলাদেশকে চিরতরে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য পরিকল্পনা

বণিক বার্তা শারফুদ্দিন আহমেদ প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৯:২২

স্বাধীনতার জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছে বাংলাদেশকে। প্রায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দিয়েছে বিভিন্ন স্তরের অসংখ্য মানুষ। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ৩১ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত সময়কালে যেসব বাঙালি সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি ও বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিক, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক ও সংগীতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং এর ফলে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা ওই সময়ে চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তারা শহীদ বুদ্ধিজীবী। পরিকল্পিতভাবে ১৪ ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এ দিনকে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস’ ঘোষণা করেন।


১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে স্বাধীনতাযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সঙ্গে রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী বাংলাদেশের অসংখ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, কবি ও সাহিত্যিকদের চোখ বেঁধে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে তাদের নির্যাতনের পর হত্যা করে। পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত করে। পরবর্তী সময়ে ঢাকার মিরপুর, রায়েরবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে গণকবরে তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর নিকট আত্মীয়রা মিরপুর ও রাজারবাগ বধ্যভূমিতে স্বজনের মরদেহ শনাক্ত করেন।


পাকিস্তানি সৈন্যরা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। ওরা আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে একে একে হত্যা করে এ দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে পুরো দেশের নানা পেশার মেধাবী মানুষকে হত্যার জন্য তারা তালিকা তৈরি করে। পাকিস্তানের মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এ দেশের ২০ হাজার বুদ্ধিজীবীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন। এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর মাধ্যমে তারা হত্যার এ নীলনকশা বাস্তবায়ন করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পরাজয় নিশ্চিত বুঝতে পেরে পাকিস্তানি শাসক চক্র বাংলাদেশকে চিরতরে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হয়। তারা এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সহায়তায় এ দেশের চিন্তাবিদ, শিক্ষাবিদ ও সৃজনশীল ব্যক্তিদের হত্যার জন্য নতুনভাবে পরিকল্পনা করে।


১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের একেবারে অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত তারা এ হত্যাকাণ্ড চালায়। পাকিস্তানি বাহিনী যখন বুঝতে পারে তাদের পরাজয় সুনিশ্চিত তখন তারা বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার এক ঘৃণ্য নীলনকশা প্রণয়ন করে। নীলনকশা অনুযায়ী ৭ থেকে ১৪ ডিসেম্বর চূড়ান্ত হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। ১৯৭১-এর বুদ্ধিজীবী হত্যাকে দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম পর্ব ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় পর্ব ১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণের পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত। প্রথম পর্বে যাদের হত্যা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্বী শিক্ষক এম মুনিরুজ্জামান, ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সুখরঞ্জন সমাদ্দার, সুরসাধক আলতাফ মাহমুদ, ভাষাসৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা, সাধনা ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডা. যোগেশচন্দ্র ঘোষ, কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নূতনচন্দ্র সিংহ প্রমুখ। সাংবাদিক মেহেরুন্নেসা, সেলিনা পারভিন, শহীদ সাবের প্রমুখ এ রাতে শহীদ হন। দ্বিতীয় পর্বের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে আলবদর বাহিনী। এ পর্বে যাদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ও বিশিষ্ট নাট্যকার অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক রাশীদুল হাসান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য, অধ্যাপক গিয়াসউদ্দিন আহম্মদ প্রমুখ। তারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে কর্মরত ছিলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে শহীদুল্লাহ কায়সার, সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজামউদ্দীন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফা প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনদের। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক বুদ্ধিজীবীর লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও