দেশের জন্য যে সুযোগ দ্বিতীয়বার আসে না

সমকাল ফারুক ওয়াসিফ প্রকাশিত: ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৩০

‘সব সুখী পরিবার একই রকম, কিন্তু সব অসুখী পরিবার যার যার মতো করে অসুখী’– রুশ সাহিত্যিক লিও তলস্তয়ের আনা কারেনিনা উপন্যাসের শুরুর এই বাক্যটা আজ বাংলাদেশের মনে করা দরকার। পৃথিবীর যেসব দেশ নিম্নমধ্যম আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে, তাদের সবার গল্পটা একই রকম। কিন্তু যারা আর এগোতে পারেনি, তাদের একেকজনের সমস্যার ধরন ও কারণ একেক রকম। যারা উন্নত হয়েছে, তারা প্রতিষ্ঠান গড়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক উদ্ভাবনা বা চমক এনেছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার মান বাড়িয়েছে, প্রতিযোগিতার যোগ্যতায় এগিয়ে গিয়েছে। এসবের মধ্যে একটা বিষয় সবার মধ্যে দেখা গেছে। সেটা হলো, দেশ গড়ার রূপরেখা নিয়ে শাসক এলিটদের বিভিন্ন অংশের মধ্যে একটা সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করা।


এটা জরুরি। কারণ, মধ্যম আয়ের ফাঁদ বলে একটা কথা উন্নয়নশাস্ত্রে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত। গত পাঁচ যুগে জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুর ছাড়া এশিয়ার কোনো দেশ মধ্যম আয়ের দেশের থেকে উন্নত দেশের পদোন্নতি পায়নি। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড তো পারেইনি, এমনকি মালয়েশিয়াও এখনও উচ্চ আয়ের দেশ হতে পারেনি। পৃথিবীর প্রায় শখানেক দেশ এখন মধ্যম পর্যায়ে পড়ে আছে, কারও কারও এই পড়ে থাকার বয়স কয়েক যুগ।


আমরা জানি, যেসব দেশকে মধ্যম আয়ের ফাঁদে পড়া দেশ বলা হয়, যারা নাকি মাথা পিছু ২ থেকে সাড়ে ৭ হাজার ডলার আয়ের কোটায় ২৮ বছর ধরে পড়ে আছে, অথবা ১৪ বছর যাবত যাদের মাথাপিছু আয় সাড়ে ৭ থেকে সাড়ে ১১ হাজার ডলারে আটকে আছে, অথবা মধ্যম আয়ের সীমানার মধ্যে থাকতে হচ্ছে ৪২ বছর ধরে। বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করেছে, আমাদের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় আড়াই হাজার ডলার ছাড়িয়েছে। সবচেয়ে ধনীদের আয় যখন রকেট গতিতে বাড়ে, যখন ধনী আর গরিবে আয় বৈষম্য সব রেকর্ড ছাপিয়ে যায়, তখন আপনার ১ হাজার আর আমার ১০০ টাকাকে গড় করলে ৫৫০ টাকা আয় দেখানো যায় বটে; কিন্তু এই গড়ের সুবাদে আমার আয় ১০০-এর ওপর এক টাকাও আসলে বাড়ে না। এই শুভঙ্করের ফাঁকি মেনে নিয়েও প্রশ্ন করা যায়, আমরা নিম্নমধ্যম স্তর থেকে মধ্যম স্তরে পৌঁছাব কতদিনে, আদৌ কি ফাঁদে আটকে থাকার নির্ধারিত মেয়াদ অর্থাৎ ২৮ বছরের আগে পৌঁছাব?


এখানেই তলস্তয়ের আনা কারেনিনা উপন্যাসের ওই কথাটি স্মরণে আসে। ইন্দোনেশিয়া সামরিক শাসন, পূর্ব তিমুর রাজ্য নিয়ে বিবাদ ইত্যাদি কারণে পারেনি, ভারত প্রাযুক্তিক ও রপ্তানিতে চমক দেখাতে না পারার জন্য আটকে আছে, পাকিস্তানের যন্ত্রণা তার সেনাশাসন, আর্জেন্টিনা দুর্নীতি ও মাদকযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়েছে। তাই তারা পারেনি। ওপরে বলা সংকটগুলো বাংলাদেশে আছে, বাড়তি আছে একটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। দেশ শাসনকারী এলিট গোষ্ঠীগুলির মধ্যে যতটা দ্বন্দ্ব বাংলাদেশে দেখা যায়, এক দল আরেক দলকে যেভাবে মাইনাস করতে মরিয়া, যেভাবে ভূরাজনৈতিক দুটি শিবিরে দেশের রাজনীতি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, যেভাবে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্বাস বিসর্জন দেওয়া চলছে, তা নিয়ে পৃথিবীর কোনো দেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারেনি। কোনো রেকর্ড নেই, কোনো শাস্ত্র কোনো বিজ্ঞান কোনো ইতিহাস বলে না যে, এ রকম অগণতান্ত্রিকতা নিয়ে, এ রকম হানাহানি আর বিভক্তি নিয়ে এ রকম মুখোমুখি দ্বিজাতীয়তাবাদ নিয়ে কোনো দেশ উন্নত হওয়া দূরে থাক, নিতান্তই মধ্যম আয়ের দেশ হয়েছে!


দেশ এক পায়ে চলে না। মানুষের মতোই স্বাভাবিক দেশের দুটি পা, দুটি রাজনৈতিক ধারা থাকে। আমেরিকান ধারার চিন্তকেরা বলে থাকেন, রাজনৈতিক ধারা দুইয়ের বেশি হলে সরকারগুলো অস্থিতিশীল হয়, নিত্যনতুন কোয়ালিশন গড়ে ওঠে আর ভাঙে। ফলে কমজোরি সরকার তৈরি হয়, যারা কোনো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বা দীর্ঘদিন ধরে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যেতে পারে না। যা হোক, দেশের যদি দুটি পা হয়, তাহলে একটি যখন সামনে পদক্ষেপ নেবে, অন্যটি পেছন থেকে তাকে অনুসরণ করবে। পেছনের পা যখন সামনে যাবে, তখন সামনে থাকা আগের পা-টি তাকে সেই জায়গা করে দেবে। নাহলে হয়ে যাবে ফ্রগ জাম্প। দুই পা দু’দিকে যেতে চাইলে হাঁটা সম্ভব না। আবার দুই পা একসঙ্গে সামনে যেতে চাইলে হাঁটা বা দৌড়ানোর বদলে ব্যাং লাফ দিয়ে চলতে হবে। সেটি কোনো কাজের কথা না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও