আসাদ চৌধুরীর অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার: ‘দেশে মানুষের সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি’
কবি তখনো অসুস্থ। আগের দিন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছেন। আবার কানাডায় যাওয়ার তোড়জোড় চলছে। তাকে দেখতে স্বজনদের নিত্য আনাগোনা। কবির কষ্ট হচ্ছে, তবু খেয়াল রাখছেন অতিথি, স্বজনদের আপ্যায়নের দিকে।
গত ফেব্রুয়ারির এক সকালে কবি আসাদ চৌধুরী সময় ও সমাজ নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। সেই মাসে শেষবারের মতো আসাদ চৌধুরী ঢাকা ছাড়েন। অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন গল্পকার ফয়সাল আহমেদ।
পাকিস্তান শাসন দেখেছেন, দেখছেন বাংলাদেশ। এই সময়ে দাঁড়িয়ে কী মনে হয় কতটা এগিয়েছি আমরা?
আসাদ চৌধুরী: দেশের অনেক কিছু হলেও মানুষের সামাজিক মর্যাদা বাড়েনি। আমরা চেয়েছিলাম বাংলাদেশে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলমান-খ্রিষ্টান যাই হোক না কেন, প্রত্যেকের সমান সম্মান থাকবে বা দেশকে তা নিশ্চিত করতে হবে। উল্টো সাম্প্রদায়িকতা পুঁজি করে চলে ক্ষমতাসীন সরকার। ব্রিটিশ আমলেও দুর্দান্ত কিছু মানুষ ছিল, একটি সাহসী সমাজ ছিল। আজকে সে সমাজের চিহ্নও নেই।
প্রায় বছর ১৫ আগে কমরেড মণি সিংহ-ফরহাদ স্ট্রাস্টের এক বক্তৃতায় আমাদের স্যার মমতাজুর রহমান বলছিলেন, মৃত সত্তার ক্রমবিকাশ হয় না। বাঙালি মধ্যবিত্ত একটি মৃত সত্তা। এগুলো আমাদের গবেষকদের চিন্তা করা উচিত। আমার খুব ভালো লাগছে এবার এশিয়াটিক সোসাইটির কয়েকটা প্রবন্ধ দেখলাম, যেখানে আমাদের এথনিকাল সম্পর্কের সাথে ভাষার সম্পর্ক নতুনভাবে বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। এগুলো অনেক বড় ব্যাপার।
তবে এভাবে কয়েকটা লেখায় হবে না। এজন্য আরও অনেককে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু আমাদের এখানে যারা সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ ভালো তারা বিভিন্ন এনজিওতে সময় দিয়ে প্রচুর টাকা পান। তাদের কি মাথা ব্যথা আছে সমাজ নিয়ে চিন্তা করার? তাহলে দেশ নিয়ে কে ভাববে?
আপনার প্রথম কবিতার বই 'তবক দেয়া পান' ১৯৭৫ সালে বেরিয়েছে। তারপর ২০০৬ সালে এসেছে 'ঘরে ফেরা সোজা নয়' এরপর নতুন কোনো বই এসেছে?
আসাদ চৌধুরী: এসেছে। আরও গোটা চারেক বই এসেছে। গত তিন বছরে তেমন লিখতে পারিনি কিন্তু তার আগে প্রচুর লিখেছি। হয়তো পাঠক সেভাবে পাননি। কবিতার পাঠকওতো কমে গেছে। আমরা এখন শামসুর রাহমান, আল মাহমুদের কবিতা মিস করছি, আবু জাফর ওবায়দুল্লার কবিতা মিস করছি। রফিক আজাদ, সৈয়দ শামসুল হকের কবিতাও মিস করেই যাচ্ছি।
প্রথম কবিতার বইয়ের নাম 'তবক দেয়া পান' কেন?
আসাদ চৌধুরী: আমি বইয়ের নাম নিয়ে চিন্তা করছিলাম। এমন একটি নাম দিতে হবে যেটা বাঙালির মাঙ্গলিক চিহ্ন। যেমন- পান, মাছ, দুধ এগুলো মাঙ্গলিক চিহ্ন। যেকোন বিয়েতে পান দিতে হয়, দুগ্ধজাত জিনিস দিতে হয়। সেখান থেকেই পানের ভাবনা। আমি দেখলাম শুধু পান ভালো লাগে না- তখন 'তবক দেয়া পান' নামটা দিলাম। আর পান আমার ভালোও লাগতো।
- ট্যাগ:
- মতামত
- স্বাধীন দেশ
- সামাজিক মর্যাদা