তারকা হওয়ার যুদ্ধে শৈশব কি ঝরে পড়বে?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশু-কিশোরদের মধ্যে তারকা হওয়ার প্রবণতা। সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণ ও জনপ্রিয়তা লাভের চেষ্টা চোখে পড়ার মতো।
সম্প্রতি কয়েকটি শিশুর ক্ষেত্রে এ প্রবণতা বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। তারা এমনভাবে কথাবার্তা বলছে, রিল বানাচ্ছে, টিকটক করছে, যা দেখেশুনে স্তম্ভিত হয়ে যেতে হয়। শিশু হয়েও তারা যেন শৈশবের প্রতিনিধি নয়; বরং যেন ঢুকে পড়েছে বড়দের জগতে। তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ, সাজপোশাক—সবই বড়দের মতো।
অনেক সময়ই প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়াই তারা এমনভাবে কথা বলছে কিংবা এমন বিষয় নিয়ে মতামত ব্যক্ত করছে, যা রীতিমতো অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে। বুঝতে পারি, এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য শিশুর প্রতিভার বিকাশ নয়, বরং স্বল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা।
লক্ষণীয় ব্যাপার হলো, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের এ ধরনের উপস্থিতির বিষয়টি তাদের পরিবারের অজানা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই মা-বাবা, অভিভাবক কিংবা পরিবারের বড়দের সীমাহীন উৎসাহ-উদ্দীপনায় শিশুরা যেন তারকা হওয়ার অস্বাস্থ্যকর যুদ্ধে নেমে পড়েছে। আমি মনে করি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিশুদের এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন উপস্থিতির দায় শিশুর একার নয়; বরং এই দায় শিশুর পরিবারের এবং সামগ্রিকভাবে আমাদের সবার।
ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম জনপ্রিয় হওয়ার আগপর্যন্ত মানুষের প্রতিভা প্রদর্শনের মাধ্যম ছিল থিয়েটার কিংবা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক মঞ্চ। ছিল পত্রপত্রিকা, বইপুস্তক আর পরবর্তী সময়ে এল রেডিও ও টেলিভিশন। এসব মাধ্যমে যে কেউ চাইলেই অংশ নিতে পারত না। এসব মাধ্যমে সুযোগ পেতে হলে যোগ্য হয়ে উঠতে হতো। যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তবেই সুযোগ মিলত নিজের প্রতিভাকে সবার সামনে মেলে ধরার।