উদার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন রাজনৈতিক দলের অভাব আছে
শান্তনু মজুমদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। গণতন্ত্র, গণতন্ত্রের ঘাটতি, নির্বাচন, রাষ্ট্র ও সুধী সমাজের সম্পর্ক, রাজনৈতিক ধর্মনিরপেক্ষতা, আত্মপরিচয়ের রাজনীতি, ডিজইনফরমেশন তথা কুতথ্য এবং ধর্মীয় গুজবের মতো বিষয়গুলো নিয়ে তিনি গবেষণা করেন। আগামী সংসদ নির্বাচন এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন।
বর্তমানে দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
শান্তনু মজুমদার: সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আর সবার মতো আমার মনেও একধরনের অস্বস্তি ও উদ্বেগ আছে। পরিস্থিতিটা স্বাভাবিক নয়। তবে আতঙ্কিত নই। রাজনীতির প্রভাব জনজীবনে পড়তে শুরু করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানা দিক থেকে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মানুষের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন জীবনেও এখন চাপটা লাগছে। সার্বিকভাবে পরিস্থিতিটা সুখকর কিছু নয়।
পাঁচ বছর পরপর নির্বাচন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। এর সমাধানের কি কোনো উপায় নেই?
শান্তনু মজুমদার: আপনি কি কোনো চটজলদি জাদুকরি সমাধানের কথা ভাবছেন? সে ক্ষেত্রে আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। রাষ্ট্রীয় ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী ও স্বাধীন না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা কমে যায়। এই অর্জনটা সময়সাপেক্ষ। পৃথিবীর কোথাও এটা আসমান থেকে পড়েনি। ২০০ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাস বলে, পৃথিবীর কোনো দেশেই বিনা পরিশ্রমে, বিনা টেনশনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি। দেশে নির্বাচনের ঘণ্টা বেজে গেছে। এখন এসব আলোচনার সুযোগ কম। এখনকার কাজ হচ্ছে এবারের নির্বাচন গণতন্ত্রসম্মত উপায়ে সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ করার ভাবনা-চিন্তা করা এবং এই লক্ষ্য পূরণে সক্রিয় হওয়া।
তবু এই আলোচনাটা আরেকটু চলুক?
শান্তনু মজুমদার: ঠিক আছে। দেশের কিছুসংখ্যক জ্ঞানী-গুণী মানুষ তিন দশক ধরে আমাদের মন ছোট করে দেওয়ার মতো কথা বলছেন। তাঁদের কথাবার্তা থেকে মনে হয়, এ দেশের মতো খারাপ রাজনীতি আর রাজনীতিক বিশ্বের আর কোথাও নেই। এ ধরনের পর্যবেক্ষণ কিন্তু তথ্য-উপাত্তভিত্তিক নয়। এ ধরনের পর্যবেক্ষণ থেকে একটি গণতন্ত্রবিরোধী উপসংহারেও পৌঁছে গেছেন কিছু মানুষ। উপসংহারটা হচ্ছে, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাহলে করণীয় কী? করণীয় হচ্ছে ‘নিরপেক্ষ’ ব্যক্তিদের অধীনে নির্বাচনটা ছেড়ে দেওয়া। এই ‘নিরপেক্ষ’ শব্দের কোনো ব্যাখ্যা অবশ্য জানা যায় না। আর এই ‘নিরপেক্ষ’ ব্যক্তিরা যে অনির্বাচিত, এ কথাটা কোথাও বলার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় একটি প্রশ্ন অনালোচিত থেকেই যায়—গণতন্ত্রে যেকোনো পরিচয়েই হোক, অনির্বাচিত ব্যক্তিদের ক্ষমতা গ্রহণের সুযোগ আছে কি না? কিছু জ্ঞানী মানুষ আবার তত্ত্বাবধায়কের বিরোধিতা দেখলে আবেগী প্রতিক্রিয়া দেখান। তখন আলোচনা বা তর্ক কোনোটিই চলে না। কেউ কেউ তত্ত্বাবধায়কবিরোধীকে অমুকের দালাল-তমুকের দালাল হিসেবে লেবেল লাগিয়ে দুর্নাম ছড়ান।