১৭ বছর কেটে যায় বর্বরতা বদলায় না
ঢাকার পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর দুই রাজনৈতিক পক্ষের সংঘর্ষের সময় রাজপথে দেখা গিয়েছিল লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মারার একাধিক দৃশ্য। সেই বর্বর আচরণের ভিডিও বিচলিত ও বিপর্যস্ত করেছিল বোধসম্পন্ন মানুষদের।
এর পর ১৭ বছর কেটে গেলেও এ দেশের কিছু মানুষের বর্বরতা বদলায়নি। গত ২৮ অক্টোবরও একই এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের সময় আবার দেখতে হলো সে ধরনের বর্বরতা। এবার দলছুট পুলিশ সদস্যের ওপর লাঠি হাতে বোধশূন্য উন্মাদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে বেধড়ক পেটানো হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক পুলিশ সদস্য মুমূর্ষু অবস্থায় ফুটপাতে পড়ে আছেন। পাশের গলি থেকে কয়েকজন বেরিয়ে এলো এবং একজন হাতের লাঠি দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা সেই অসহায়, আহত পুলিশ সদস্যকে ভয়ংকর নিষ্ঠুরতার সঙ্গে পেটাতে থাকল। হতভাগ্য সেই পুলিশ সদস্য দুর্বলভাবে হাত নাড়াচ্ছেন। অর্থাৎ তখনও বেঁচে আছেন। মুহূর্তেই লাঠি হাতে ছুটে এলো আরও অনেকে এবং লাঠি দিয়ে নৃশংসভাবে পেটাতে থাকল। নিথর পড়ে থাকা একজন মানুষকে অনেকে মিলে উন্মাদের মতো আঘাতের সেই দৃশ্য অসহনীয়। কিন্তু আঘাতকারীদের মধ্যে কোনো দ্বিধা বা দয়া দেখা যায়নি।
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, মাটিতে পড়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে অনেকে। কেউ কেউ মুখে ইটের টুকরো দিয়ে বারবার আঘাত করছে; শরীরের ওপর উঠে লাথি মারছে। ভাবতে কষ্ট হয়, নির্মম এসব লোক আমাদেরই সমাজের। যে সমাজে এমন মানবিকতাবিহীন লোকেরা ঘুরে বেড়ায়, সেই সমাজ নাগরিকদের জন্য কতটা বিপজ্জনক আর ঝুঁকিপূর্ণ! সেই চিন্তা আমাদের ভীত আর বিপর্যস্ত করে।
দুটি ২৮ অক্টোবরের মাঝে ১৭ বছরের ব্যবধান। এই দীর্ঘ সময়ে দেশে রাজনৈতিক হানাহানি থামেনি; ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়া নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ বন্ধ হয়নি। বিন্দুমাত্র বদল হয়নি কিছু মানুষের বর্বরতা, নৃশংসতার। শিক্ষাবিদ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ গ্রামে দুই পক্ষের মধ্যে এক ‘কাইজার’ বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন– ‘সবাই ঢাল, সড়কি, বল্লম, কোচ, রামদা হাতে নিয়ে যখন খোলা মাঠের ওপর দিয়ে দুর্বোধ্য চিৎকার করতে করতে সারিবদ্ধভাবে পরস্পরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন চোখের সামনে এক টুকরো অকর্ষিত ও রক্তস্নাত মধ্যযুগকেই যেন দেখতে পাচ্ছিলাম।’ ১৭ বছরের ব্যবধানে দুটি ২৮ অক্টোবরে আমরা দেখলাম, শুধু গ্রাম নয়; রাজধানীতেও ফিরে আসতে পারে মধ্যযুগীয় বর্বরতা।