যা হলো তা আন্দোলন দমনের কৌশল
বিএনপির ডাকে নয়াপল্টনের মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল। সারাদেশ থেকে সমর্থকরা লুকিয়ে-চুরিয়ে ঢাকায় এসেছেন। এই প্রস্তুতি সংঘাতের প্রস্তুতি ছিল না। বিএনপি নেতৃবৃন্দও এই সমাবেশ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন। তাই নেতাকর্মী কেউই সমাবেশ পণ্ড হোক তা চাইবে না। সমাবেশের চিত্র দেখেও মনে হয়েছে, কেউ সংঘাতের জন্য প্রস্তুত ছিল না। এ জন্যই পুলিশের পক্ষে খুব সহজেই সমাবেশ ভন্ডুল করা সম্ভব হয়েছে। এতে বোঝা যায়, সরকার বিদেশি চাপে যতটা ছাড় দিয়ে এসেছে, এখন আর সেটা করবে না। এ ঘটনা থেকে একটা জিনিস পরিষ্কার যে, বড় ধরনের ধরপাকড় হবে।
আমরা চেয়েছিলাম আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে অগ্রসর হোক। কিন্তু এমনও হয় যে, একটা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ২৮ অক্টোবর দুপুরে নয়াপল্টনে যা ঘটল, সে ক্ষেত্রে কাদের দায় দেব? ভবিষ্যতে ঘটনাবলি আরও স্বচ্ছভাবে উদ্ঘাটিত হলে দায়দায়িত্ব চিহ্নিত করা যাবে। তবে, কাকরাইল মোড়ের ছোট্ট ঘটনা সেখানেই থেমে যেত, যদি পুলিশ অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া না দেখাত। মহাসমাবেশের প্রান্তের দিকের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মহাসমাবেশে সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার শেলের গ্যাস, রাবার বুলেট ইত্যাদি মেরে ভন্ডুল করে দেওয়া কেমন কথা?
বিএনপির নেতৃত্ব আন্দোলন ভালোভাবেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। কর্মী-সমর্থকরা তো বটেই, সাধারণ মানুষও ধীরে ধীরে এতে শামিল হচ্ছিল। যেসব মানুষ নিত্যদিন কষ্ট করে খাদ্য ও রসদ জোগাড় করে, সেসব মানুষের সমর্থন এই আন্দোলন পেতে শুরু করেছিল। আন্দোলন একটা মোমেন্টামের দিকে যাচ্ছিল। সে রকম সময়ে সমাবেশ ভন্ডুল করা থেকে শুরু করে পুলিশ-বিএনপির মধ্যে সংঘাত এক মর্মান্তিক অধ্যায়ের সূচনা করল। বাংলাদেশে আন্দোলন সামলানোর অনেক রকম কায়দা দেখা যায়। যখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো অ্যাকশনে যায়, তা সাধারণ মানুষকে ভয় পাইয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এতদিন আন্দোলন যে বড় হয়নি তার কারণ এই না যে, জনগণ ক্ষমতাসীনদের পছন্দ করে। বরং ক্ষমতাসীনরা জনমনে ভীতির সঞ্চার করতে পেরেছিলেন। তাই সাধারণ মানুষ প্রকাশ্যে আন্দোলনে যোগ দিতে ঝুঁকি বোধ করে। গোপনে গোপনে তারা জড়িত হতো বা মতপ্রকাশ করত। আন্তর্জাতিক চাপে সেই ভয় যখন কেবল কাটতে শুরু করেছে, তখনই এই নতুন সহিংসতা।