সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ জরুরি
সড়ককে নিরাপদ করার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর ২২ অক্টোবর পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘আইন মেনে সড়কে চলি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’ সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের সৃষ্ট স্বাভাবিক জীবনযাপনের ক্ষেত্রে একটি জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকাল শহরের ব্যস্ততম রাস্তায় হেঁটে বা যানবাহনে চলাফেরা রীতিমতো বিপজ্জনক। বর্তমানে বাসায় সঠিক সময়ে কেউ না ফিরলে যে কথাটি সর্বপ্রথম মনে হয়, তা হলো সড়ক দুর্ঘটনা।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, উন্নত দেশের তুলনায় বাংলাদেশে দুর্ঘটনা প্রায় ৩০ গুণ বেশি। বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার উন্নত বিশে^র তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি। এক হিসাবে দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ হাজারেরও বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। ২০১৬ সালের বিআরটিএর জরিপ মতে, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতি বছর ২৩ হাজার ১৬৬ জন মানুষ নিহত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সারা পৃথিবীতে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১ লাখ ৮০ হাজার শিশু মারা যায়। ২০১০ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯৬ শতাংশ শিশু ছিল অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় যে ক্ষতি হয় তার আর্থিক পরিমাণ দাঁড়ায় বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির দুই ভাগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, আন্তর্জাতিকভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৫২০ বিলিয়ন ডলার।
বিশ্বের অন্যতম জনবহুল মেগাসিটি- ঢাকা। প্রায় আড়াই কোটি লোকের তুলনায় এখানে রাস্তা বা যানবাহন কোনোটাই যথেষ্ট নয়। আর যেগুলো আছে সেগুলোর বেশিরভাগই জরাজীর্ণ। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনার পাশাপাশি মৃত্যুর সংখ্যা। তুলনামূলকভাবে ঢাকার চেয়ে ঢাকার বাইরে দুর্ঘটনার হার কিছুটা কম। দূরপাল্লার বাস, ট্রাকই মূলত এক্ষেত্রে দুর্ঘটনার শিকার হয়। ২০১৮ সালে ঢাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর গণআন্দোলনে নামে দেশের প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা। তারা নিজের হাতে ট্রাফিক কন্ট্রোল করে দেশের আইন যে অন্ধত্বের ভূমিকা পালন করছে তা হাতেনাতে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই আমাদের আজ ভাবতে হচ্ছে এর প্রতিকার নিয়ে।