ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংকের মালিক—এ গলদ শোধরাতে হবে
ড. এ কে এনামুল হক ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের ডিন ও অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। এছাড়া তিনি এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তৈরি পোশাক শিল্প, বিশ্ববাজার, রফতানি খাত, দক্ষ জনশক্তি, রেমিট্যান্স, জলাবদ্ধতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি খাতে প্রভাব, ঋণখেলাপিদের দৌরাত্ম্য, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ পরিস্থিতি, ব্যাংক খাত, ডলারের বিনিময় হার, অর্থ পাচার ও অন্যান্য প্রসঙ্গে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম
আমাদের রিজার্ভ কমতির দিকে, এটা নিয়ে কি উদ্বেগের কারণ আছে?
ড. এ কে এনামুল হক: প্রথম প্রশ্ন হওয়া উচিত কেন কমছে? আমরা কেন এটা কীভাবে খরচ করছি? একদিকে এটা আমরা আমদানির জন্য খরচ করি। আমদানি যদি না বাড়ে তাহলে দ্বিতীয় প্রশ্ন, আমরা কি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ডলার ব্যয় করছি? কিন্তু উপাত্তে দুটোর কোনোটিরই সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে না। আমার রেমিট্যান্স বাড়ছে, আমার রফতানি বাড়ছে। তাহলে সবই তো ইতিবাচক। তাহলে ডলার রিজার্ভ কমছে কেন, এর মূল কারণ কি বিনিময় হার কৃত্রিমভাবে কম রাখা? এটা যারা বিদেশে টাকা পাচার করতে চান তাদের জন্য ভালো। এর সুবিধাভোগীদের মধ্যে রয়েছে আমাদের মতো লোক যারা বিদেশে ভ্রমণ করে। অথবা যারা হুন্ডির ব্যবসা করবে তাদের জন্য ভালো। আমার মতে, ডলার মার্কেটকে স্ট্যাবিলাইজড করতে গিয়ে আমরা এ কাজটা করছি। এতে কী হচ্ছে? আইসক্রিমটা সস্তা হচ্ছে। অথচ আইসক্রিমটা সস্তা না করলেও চলত। সুতরাং, এটা আর কোন কারণে হচ্ছে তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। তাই আমি বলব, এটা নিয়ে উদ্বেগের কারণ আগে বোঝা উচিত। তারপর সমাধান আসবে। যেভাবে দেখছি সেটা আমার কাছে এক প্রশ্নবোধক চিহ্ন । এটা কেন হচ্ছে? কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এটা স্পষ্ট করা যে কেন আমার রিজার্ভ থেকে ডলার প্রতি মাসে কমছে? আমরা কি আমদানি বাড়িয়েছি? এটা তো ডাটায় দেখা যাচ্ছে না। ডলার কোথায় যাচ্ছে? এটা পরিষ্কার করা দরকার।
এর পেছনে অর্থ পাচারের কোনো ভূমিকা কি আছে?
ড. এ কে এনামুল হক: হতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। যদি খোলা বাজারে ডলারের রেট বেশি থাকে, তাহলে হুন্ডিতে আসবে। হুন্ডিকে আমরা বলি পাচার। এটা আসলে বলা কঠিন। কারণ এতে তো দেশ থেকে টাকা যায় না। ওখানেই টাকা থাকছে আমাদের এখানে অন্য খাত থেকে টাকাটা যাচ্ছে। এটাকে পাচারের সংজ্ঞায় খুঁজে পাবেন না। তার মানে আমার দেশে আসা টাকার পরিমাণ কমে গেল। এটা একটা হতে পারে। আর দেশ থেকে টাকা যাওয়া এটা যে হচ্ছে তা তো নানা পরিসংখ্যানে আছে। আমি মনে করি, ডলার রেটে আমাদের যে চাপটা আছে সেটা সঠিক চাপ নয়। এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে। রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। মধ্য থেকে একটা গোষ্ঠী তো আমাদের দেশ থেকে সব সময়ই চলে যাওয়ার চেষ্টায় আছে। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ সবারই এক পা দেশের বাইরে। মূল প্রশ্ন হলো, আমরা কি আসলেই দেশে থাকতে চাইছি? নাকি দেশ থেকে চলে যাচ্ছি, এই যে চিন্তা এটাই সমস্যা। যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষিত শ্রেণীর মধ্যে এ প্রবণতা থাকবে তত দিন টাকা পাচার হবেই। কারণ আমি যখন আমার ছেলেকে বাইরে পড়াই তখন টাকা তো পাচার করিই। কীভাবে করি সেটা পরের কথা, কিন্তু যাচ্ছে। মানুষ ঢাকা থেকে সম্পত্তি বিক্রি করে চলে যাচ্ছে। ইমিগ্রেশন দিয়ে টাকা যাচ্ছে। টাকা পাচার হওয়ার অনেকগুলো কারণ আছে। আমাদের শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, সচিব, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক সবার মধ্যেই দেশ ছাড়ার প্রবণতা। সবাইকে কীভাবে দেশে রাখা যায় সে কৌশল নিয়ে এগোনো উচিত।