লুই কানের সঙ্গে দ্বিতীয় দেখা ও কিছু কথা
লুই কানের সঙ্গে দেখা হলো অনেক দিন পর। প্রায় ৬০ বছর হবে। সেটা পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের সময়। হঠাৎ করে ফার্মগেট এলাকা, যেখানে ছিল রাজাবাজার-ইন্দিরা রোডের দিকে ছোট ছোট পথ। সেখানে তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল। বড় বড় রাস্তার পরিকল্পনা করা হলো। আমরা জানলাম, এখানেই হবে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাজধানী। পাকিস্তানের প্রথম রাজধানী থাকবে পশ্চিম পাকিস্তানেই। ১৯৪৭ সালের পর রাজধানী করাচি থেকে রাওয়ালপিন্ডি এবং এরপর হয় ইসলামাবাদ। আর দেশের দুই প্রান্তের মধ্যে বৈষম্য কমাতে হলে প্রয়োজন এখানেও একটা রাজধানী করা। তখন একতলা একটা হলঘরে ওপরে টিনের চালা দিয়ে গরিবানা হালের প্রাদেশিক আইনসভা চলছিল। আর জাতীয় সংসদের জন্য কোনো ব্যবস্থাই ছিল না। একটা ব্যবস্থা ছিল জগন্নাথ হলের ওখানে, যেখানে বায়ান্ন সালের ভাষা আন্দোলনের সময় প্রাদেশিক আইনসভার অধিবেশন চলছিল।
আইয়ুব খান উর্দি ছেড়ে রাজনীতিতে নেমেছেন। প্রচুর মার্কিন সাহায্য আসছে। কাজেই প্রয়োজন রাস্তাঘাট, কলকারখানা নির্মাণ। শুরু হলো কর্মযজ্ঞ। বিশ্ববিখ্যাত স্থপতি লুই কানকে দিয়ে নকশা করে বেশ তড়িঘড়ি কাজ শুরু হয়ে গেল। প্রশস্ত রাস্তা, বিশাল সংসদ ভবন, চারদিকে কৃত্রিম জলাধার, স্পিকার, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের থাকার জায়গা এবং উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাসহ সবকিছুর কাজই শুরু হয়ে গেল।
এদিকে দেশে গণতন্ত্র নেই। অথচ গণতন্ত্রের জন্য বিশাল অবকাঠামো তৈরি হতে চলল। কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংসদ ভবন নির্মাণ হবে। একদিকে চলছে পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ লুণ্ঠন করে রাওয়ালপিন্ডি-ইসলামাবাদে নিয়ে যাওয়া আর অন্য দিকে দ্বিতীয় রাজধানীর কাজ। আমরা কিছুটা খুশিই। হোক না দরিদ্র পূর্ব পাকিস্তানে কিছু অবকাঠামোর কাজ। আন্দোলন তো থামছে না। বৈষম্য কমিয়ে আনার প্রচেষ্টাও চলছে বক্তৃতায়, বিবৃতিতে। কিন্তু সামরিক জান্তার ওপর কারোরই আস্থা নেই। গণ-আন্দোলনের চাপে আইয়ুব খান সরে গেলেন। এলেন আরেক সামরিক একনায়ক ইয়াহিয়া খান। একটা নির্বাচনও হয়ে গেল। কিন্তু ক্ষমতা হস্তান্তর হলো না। লুই কানের স্বপ্নের দ্বিতীয় রাজধানীর কাজ একটু শম্বুকগতিতে চলছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- স্থাপত্য
- স্থাপত্যশৈলী