ব্রিকস, বন্ধুত্ব ও বাংলাদেশ
গত ২২ থেকে ২৪ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকসের ১৫তম সম্মেলন যেভাবে বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়ে উঠেছিল, সেটা অতীতে দেখা যায়নি। কভিড পরিস্থিতির কারণে ২০১৯ সালের পর প্রথম সরাসরি অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন নানা বিবেচনায় ছিল গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এই সম্মেলন ঘিরে আন্তর্জাতিক নানা হিসাবনিকাশ ছিল। এ ছাড়া ব্রিকসের সম্প্রসারণও ছিল একটি বড় বিষয়। ঢাকার দিক থেকেও এ সম্মেলন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছিল।
ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া, চীন, সাউথ আফ্রিকা) একটি অর্থনৈতিক জোট। যেমন জি৭, জি২০; ব্রিকস তেমনি একটি বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির জোট। এই শতাব্দীর শুরুতে এ জোটের আত্মপ্রকাশ হয়। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করে এই জোট। বিশ্ববাণিজ্যের ২৬ শতাংশ, জিডিপির ১৬ শতাংশ তাদের। বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদ ও সামরিক-পারমাণবিক শক্তিতেও তাদের অবস্থান অগ্রগণ্য। বর্ধিত ব্রিকস ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব জিডিপির ৩০ শতাংশের অংশীদার হবে; বিশ্ব জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ ও ৬০ শতাংশ তেল-গ্যাস তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
এবারের সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক আলোচ্য বিষয় ছিল– ১. ব্রিকসের এক্সটেনশন বা নতুন সদস্য গ্রহণ, ২. অর্থনৈতিক সহযোগিতা, ৩. রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ৪. বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্থরতা, ৫. পারস্পরিক বিনিয়োগ সুবিধা, ৬. শক্তি বা জ্বালানি সম্পদের সহযোগিতা, ৭ ডিজিটাল ইকোনমি, ৮. কর্মসংস্থান, ৯. ডি-ডলারাইজেশন, ১০. ব্রিকস দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন মুদ্রা প্রচলন।
এজেন্ডা অনেক থাকলেও তিন দিন এই সম্মেলনের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ব্রিকসের পরিধি কীভাবে বাড়ানো হবে তা নিয়ে। কোন দেশকে ব্রিকসে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, কোন দেশকে করা হবে না, সে আলাপে আটকে ছিল সম্মেলনের একটি বড় সময়।
জানা যায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম থেকেই এর পরিধি বাড়ানোর বিরোধিতা করেছেন। তাঁর ভাবনা ছিল, ব্রিকস যেন কোনোভাবেই একটি ‘অ্যান্টি ওয়েস্ট ব্লক’ হিসেবে পরিচিতি না পায়। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত অনেক বিতর্কের পর তাঁকে ব্রিকসের বর্ধিতকরণের পক্ষে মত দিতে হয়েছে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সদস্যপদ
- ব্রিকস সম্মেলন
- ব্রিকস