শিগগিরই দেশে বন্যার আশঙ্কা করেছিলেন তিনি
বাঙালিদের মধ্যে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের (১৮৭৩-১৯৬২) মতো মেধাবী ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদ খুব কমই লক্ষ করা যায়। ৮৯ বছরের জীবনে ৬৫ বছরেরও বেশি সময় তিনি ‘গলি থেকে রাজপথে’ বিচরণ করে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কেবল যোগ্যতা আর বিচক্ষণতা নন, তার দূরদৃষ্টিও ছিল অসামান্য।
রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ‘শেরেবাংলা’ এবং ‘হক সাহেব’ নামে সমধিক পরিচিত। জন্মস্থান বরিশালের প্রত্যন্ত চাখার গ্রাম, একদম কাদামাটি থেকে উঠে আসা মানুষ। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস, সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ ও কৃষক প্রজা পার্টিতে নেতৃত্বদান করেছেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন স্তরে কলকাতার মেয়র, অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী, পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অনেক আকর্ষণীয় পদ অলংকৃত করেন। বয়সের ভারে শেষ জীবনে অবশ্য অনেকটা খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি।
ঘটনাটি যেমন করুণ, তেমনি হাস্যকরও। হায়রে রাজনীতি! আসলে রাজনীতির নামে সমাজে সময় সময় কত নিষ্ঠুর ও হাস্যস্পদ ঘটনাই না সংঘটিত হয়! এমনই একটি ঘটনার কথা জানা যায় শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের শেষ জীবনের।
১৯৫৮ সাল। সামরিক শাসন তখনো জারি হয়নি পাকিস্তানে, জেনারেল ইস্কান্দর মির্জা প্রেসিডেন্ট আর প্রধানমন্ত্রী মালিক ফিরোজ খান নূন। পাকিস্তানের রাজনীতি উত্তপ্ত তো একেবারে শুরু থেকেই। ইতোমধ্যে ৯২ (ক) ধারা বলে পূর্ব পাকিস্তান সরকারকে বরখাস্ত এবং প্রদেশে প্রেসিডেন্টের শাসন জারি করা হয়েছে। বিরাজমান পরিস্থিতিতে ১১ জুলাই ১৯৫৮ শুক্রবার ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভার আয়োজন করে পিকেএসপি (পাকিস্তান কৃষক শ্রমিক পার্টি)। জনসভার সভাপতি নিখিল পাকিস্তান কেএসপি প্রধান হামিদুল হক চৌধুরী।
তখন ভরা বর্ষা। আষাঢ়ের শেষ অথবা শ্রাবণ মাসের শুরু হলেও মেঘের কোনো আনাগোনা না থাকায় সেদিন আকাশ ছিল বেশ পরিষ্কার। নেতারা যথারীতি একে একে সভাস্থলে এসে উপস্থিত হলেন। কিন্তু বিকাল ৪টায় নির্ধারিত জনসভাটি লোকসমাগম না হওয়ায় কিছুতেই শুরু করা যাচ্ছে না। মাইকে ঘোষণা দিতে দিতে ইতোমধ্যে ৩০ মিনিট পার। এভাবে আরও ১৫ মিনিট। ডাকাডাকি করে শেষপর্যন্ত শুরু হলো জনসভার কাজ। কিন্তু হলে কী হবে, এ যেন ‘জন’ ছাড়া জনসভা!