ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা মোটেই অসম্ভব নয়
এডিস মশার আক্রমণে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা ও মৃত্যু পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আর এর ভয়ংকর রূপ আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে আসলেই এর সমাধান কোথায়? আমাদের দেশে এমনিতেই ডাক্তার ও সেবিকার তীব্র সংকট যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে হাসপাতাল আর হাসপাতালে স্পেসিফিক রোগের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অপ্রতুলতা। এর মধ্যে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা স্রোতের মতো বৃদ্ধি পাওয়ায় যে সমস্যা তৈরি হচ্ছে, তা সামাল দেওয়া সত্যিই অসম্ভব। ডেঙ্গু রোগীর চাপে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এ দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে মানুষ দিশেহারা। করোনা মহামারির সময় করোনা ইউনিটে সেবাদানকারী কোনো ডাক্তার বা নার্সকে যেমন ভয় পেতাম, স্বয়ং আজরাইলকে হয়তো তেমন ভয় পেতাম না। এরূপ ডাক্তার বা নার্সকে ভাড়া বাসা থেকে বের করে দেওয়ার মতোও নিষ্ঠুর ঘটনা আমরা দেখেছি। কারণ ছিল ওই ব্যক্তি করোনাভাইরাস বহন করতে পারে। তাহলে আজ যে ভয়ংকর বাহক এডিস মশা ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করছে, তাকে কীভাবে সাদরে বংশবিস্তারের সুব্যবস্থা করে দিচ্ছি? করোনার সময় নিজের জন্মদাতা বাবা ও গর্ভধারিণী মাকে জঙ্গলে ফেলে এসেছি সব মানবিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে, সেখানে তার চেয়েও ভয়ংকর হয়ে ওঠা ভাইরাসের লালনপালনকারী এডিস মশার প্রতি কেন এত সখ্য? প্রতিটি ধর্মই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। আর ইসলাম ধর্মে তো বলাই আছে ‘পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইমানের অঙ্গ’। ধর্মের প্রতিটি কথাই বৈজ্ঞানিক ও মানবতার পরিশুদ্ধতার পরিচায়ক। আমরা কি পারি না করোনার সময় যেভাবে নিজেদের এলাকায় লকডাউন করে বাইরের মানুষের অনুপ্রবেশ ঠেকিয়েছিলাম, ঠিক একইভাবে ভাইরাস বহনকারী মশার প্রজনন ক্ষেত্র বিলুপ্ত করে মশার অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে? আমরা কি পারি না করোনার সময় যেভাবে অনেক কষ্ট করে নিজেদের মাস্ক দিয়ে আবৃত করে রেখেছিলাম, তেমন করে নিজেদের এ শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত মশারি ব্যবহার করতে? করোনার সময় যেভাবে নিজেদের নিয়োজিত রেখেছিলাম কিছুক্ষণ পরপর সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত হাত ধোয়ার জন্য, একইভাবে কি পারি না প্রতিদিন একবার করে নিজ নিজ বাড়ির সামনে-পেছনে, ভেতরে-বাইরে জমে থাকা পানি পরিষ্কার করে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দিতে? করোনার সময় আমরা যেভাবে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য মাইকিং করে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করে নিজেদের কমিউনিটিতে সংক্রমণের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছি, তেমনিভাবে কি আমরা পারি না সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সব খেলার মাঠ, বিনোদনের জন্য পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ সব ধরনের মানুষ চলাচলের স্থাপনা আর স্থানগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে।