দেশে ‘কোম্পানি শাসনের’ অবসান হবে কবে
পলাশীতে নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল এক ব্রিটিশ কোম্পানি। নবাব ছিলেন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বা সুবে বাংলা বা বাংলা–বিহার–উড়িষ্যা (এখনকার ওডিশা) অঞ্চল নিয়ে গঠিত রাজ্যের সরকারপ্রধান। সেই যুদ্ধে নবাব অর্থাৎ সরকার হেরে যায় নিরেট এক প্রাইভেট কোম্পানি বা বেসরকারি বেনিয়া প্রতিষ্ঠানের কাছে।
বাংলা–বিহার–উড়িষ্যায় শুরু হয় কোম্পানির শাসন। ব্যবসায় লাভ করাটাই ছিল সেই শাসনের একমাত্র মঞ্জিলে মকসুদ। কোম্পানির লোকেরা থাকতেন কুঠি বা কোঠায় অর্থাৎ পাকা বাড়িতে। সেই কুঠিতেই ছিল বন্দিশালা, ‘রিমান্ডের’ ব্যবস্থা, গুম–খুনের বিস্তারিত কলাকৌশল।
কাগজে–কলমে নামেমাত্র নবাবের সলতে জ্বালিয়ে রাখা হলেও ‘প্রজা’ শাসনের লাঠি–বন্দুক সবই ছিল কুঠিয়াল ব্রিটিশদের কবজায়। বাংলা–বিহার–উড়িষ্যার দেওয়ানি সনদ পেয়ে জনগণের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের কাজটা শুরু করে লর্ড ক্লাইভের কোম্পানি। কাউকে কোনো হিসাব দিতে হতো না। টাকা যাঁর কাছে, তার আবার জবাবদিহি কী। এটাকেই ইতিহাসে দ্বৈত শাসন বলা হয়।
অবাধ্য প্রজা বা রাজকর্মচারীকে তাঁরা নিজেদের তরিকায় শায়েস্তা করতেন। ব্যবসার স্বার্থে যখন যেভাবে প্রয়োজন, সেভাবে ব্যবস্থা নিতেন। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকে তার কিঞ্চিত বর্ণনা পাওয়া যায়। বর্ণনা থাকুক বা না থাকুক, বেনিয়া ব্রিটিশ কোম্পানির সেই কায়দা–কৌশলগুলো আমাদের আর শেখাতে হয়নি। কীভাবে কীভাবে যেন শাসন নামের সেই শোষণপ্রক্রিয়া আমাদের খাসলতের অংশ হয়ে গেছে। ঢুকে গেছে আমাদের ডিএনএতে, অস্থিমজ্জায়।