সঠিক উত্তর দিয়ে পন্ডিত মশাইয়ের পরাজয়
ত্রিকালদর্শী বৃদ্ধ অছিমদ্দীন ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল আর হালের বাংলাদেশ আমলে ৫২ বছর পার করেছেন। পরকালের পথে পা দিয়ে রেখেছেন তিনি। অছিমদ্দীন দেখেছেন কীভাবে তার সামনে ব্রিটিশরা তল্পিতল্পাসহ চলে গেছে এ দেশ ছেড়ে, দেখেছেন কীভাবে সংসার ভেঙেছে পাকিস্তানিদের। নিজে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ স্বাধীন করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে। অতীত তার কাছে এখন ধূসর, স্মৃতির ভাঁজে ভাঁজে আনন্দ-বেদনার সুখ সর্বনাশের নানান মুহূর্তগুলো গুটিয়ে গেছে। অফুরন্ত অবসরের আয়নায় অছিমদ্দীন দেখেন তার ছেলেবেলা, কৈশোরকাল, ক্যাম্পাস জীবন, যুদ্ধের রণাঙ্গন, মনুষ্য কারসাজিতে জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির বেসাতি, নীতি-নৈতিকতার নানান বেশভূষা।
নব্বই বছরে কত কিছিমের মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে তার! জমিদার বরকন্দাজের পর একবিংশ শতাব্দীর সূচনাপ্রহরে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী’ এই সময় ও সমাজে বয়স, বর্ণ, পর্যায় ও প্রকার ভেদে নানান কিসিমের মানুষ এখনো রীতি পদ্ধতি, নীতি ও নিয়মে ঔপনিবেশিত। শ্রমজীবী কর্মক্লান্ত মানুষের পাশাপাশি অতি চালাক ফিটফাট ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও কর্মী, শিক্ষাবিহীন শিক্ষিতের সমারোহের পাশে প্রযুক্তি প্রখর মেধাবী মুখ, মুক্তবুদ্ধি শান্ত সমাহিত চিন্তাচেতনার সারিতে সহসা মৌলবাদী চেহারার মানুষ, উন্নয়নকর্মীর পাশাপাশি নিজের আখের গোছাতে তৎপর এনজিও কর্ণধার, সন্ত্রাসীর ভয়ে আতঙ্কিত মানুষ, চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারী আত্মউৎসর্গীকৃত সেই পুলিশ সার্জেন্ট, ষড়যন্ত্রের শিকার গৃহহীন মানুষ, আশ্রয়ণ প্রকল্পে হাসিমুখের মানুষ, বানভাসি মানুষ, নিঃস্বার্থ ত্রাণকর্মীর পাশে সুযোগসন্ধানী-অসৎ উদ্দেশ্য অভিলাষী চোখের মানুষ, কোণঠাসা সৎ ও নিষ্ঠাবান চাকুরে, ধান্দাবাজ আর আত্মস্বার্থের শর্করাসমৃদ্ধ জনস্বার্থসেবী আমলা, অবিবেচক বাসের হেলপার, ট্রাকের মাতাল ড্রাইভার, নীল সাদা অধ্যাপক, একচোখা আঁতেল, রাজনৈতিক শিল্পী, ঋণখেলাপি, ব্রিফকেসবাহী নতুন শিল্পপতি, নকল সরবরাহকারী, উদ্ধত ছাত্রনেতার সামনে অসহায় অধ্যক্ষ, জামিনপ্রাপ্ত সন্ত্রাসী, কুকুরের মাংস বিক্রেতা আর এসিডে দগ্ধ তরুণীর দেশে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটার। সময় সমাজ ও সংসারে এত পরিবর্তন দেখার জন্য প্রভু নিরঞ্জন তাকে যে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছেন এটাই আশ্চর্য লাগে। বড় কৃতজ্ঞতা তার সৃষ্টিকর্তার প্রতি।
- ট্যাগ:
- মতামত
- সন্ত্রাসী
- পাকিস্তানি