আমাদের উন্নয়ন ভাবনায় জল ও জলাভূমি
জলাভূমি, নদী, খাল-বিল গুরুত্বপূর্ণ ইকোসিস্টেম হিসেবে কাজ করে এবং মানুষের জীবনেও এগুলোর অবদান অপরিসীম, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জলবায়ু প্রশমন ও অভিযোজনে সাহায্য করে। বর্তমান সময়ের আধুনিকায়ন ও উন্নয়নের পরিকল্পনায় শহর তৈরি করতে গিয়ে নদী ও জলাভূমিকে তার ইকোসিস্টেম রেস্টরেশন বা পুনঃপ্রতিষ্ঠা চিন্তায় না এনে কেবল ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা শিল্প ও নগর তৈরি করে একদিকে শহরগুলোকে কেবল দালান-কোঠা সর্বস্ব নগরায়ণ করা হয়েছে। এর ফলে ঢাকার মতো শহর এখন পৃথিবীর সবচেয়ে বসবাসের অযোগ্য শহর। গত ৪০ বছরে ঢাকার তাপমাত্রা প্রায় ১০ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর একটি প্রধান কারণ নিচু জমি ভরাট ও পাইকারিভাবে ভূগর্ভস্থ পানির উত্তোলন। ঢাকার মতো চট্টগ্রাম শহরে এখন সবুজ বেষ্টনী কমে গেছে। অন্য জেলা শহরগুলোতেও জলাবদ্ধতা, দূষণ একটি বড় নাগরিক সমস্যা। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৩৩ শতাংশ রোগী পরিবেশ দূষণের কারণে অসুস্থ হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশের ভূমির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিন ভাগের দুই ভাগ প্লাবনভূমি (নদী, জলাভূমি, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় প্রভৃতি)। দেশের ৬৭ শতাংশ জমি বর্ষায় প্লাবন ভূমিতে রূপান্তর হয়, আবার শুষ্ক মৌসুমে এ ভূমিতেই দেশের ফসল আবাদ হয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণের নামে নিচু জমি ভরাট করে তৈরি হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্লাস্টারগুলো। ইকোলজি ও প্রাণবৈচিত্র্যের স্বাস্থ্য মাথায় না রেখেই কেবল ভূমি ভরাট করে দেশের উন্নয়ন করতে গিয়ে উল্টো আমাদের মানুষের স্বাস্থ্য শিক্ষা, খাদ্য উৎপাদন প্রকৃতপক্ষেই ব্যাহত হচ্ছে।