![](https://media.priyo.com/img/500x/https://samakal.com/uploads/2023/05/online/photos/Untitled-20-samakal-6474d683b2c68.jpg)
দীক্ষাগুণে শিক্ষার বিচিত্র দশা
চলতি সপ্তাহের শুরুতে শনিবার ও রোববার সমকালে শিক্ষাবিষয়ক তিনটি সংবাদ আলাদাভাবে দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য। প্রথম সংবাদটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। সেখানকার শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক শিক্ষার্থীদের ‘উৎসাহ’ দিচ্ছেন, তারা যেন খেলাধুলার বদলে প্রথম থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে থাকে। দ্বিতীয় সংবাদটি ভোলা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে। এই নেতাপ্রবর জেলার বিভিন্ন ইউনিটের পদ রীতিমতো ‘নিলামে বিক্রি’ করে থাকে। ওদিকে তৃতীয় সংবাদে দেখা যাচ্ছে, চলমান এসএসসি পরীক্ষায় সারাদেশে ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসতে পারেনি। কারণ দারিদ্র্য ও বাল্যবিয়ে। (সমকাল, ২৭ ও ২৮ মে, ২০২৩)।
শিক্ষাব্যবস্থার এই বিচিত্র দশা কেন? কারণ দীক্ষাগুণ। শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষার কথাটাও আসে। ‘শিক্ষাদীক্ষা’ প্রায় একই সঙ্গে চলাফেরা করে। এই যোগাযোগটা কিন্তু অকারণে ঘটেনি। শিক্ষা ও দীক্ষা একই সঙ্গে থাকে, তা যতই আমরা না দেখার চেষ্টা করি না কেন। আসলে দীক্ষাই শিক্ষাকে পরিচালনা করে থাকে ভেতর থেকে এবং অনেকটা অদৃশ্য পন্থায়। শিক্ষার পক্ষে ওই পরিচালনা না মেনে উপায় নেই।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক গলদ, ফাঁক-ফাঁকি রয়েছে। তা নিয়ে কথাবার্তা হয়। হওয়া খুবই প্রয়োজন। কিন্তু যে ‘অন্তর্যামী’ অনালোচিত থেকে যায় সে হলো দীক্ষাগুরু, নাম যার পুঁজিবাদ। ওই গুরুকে বিদায় না করতে পারলে ত্রুটিগুলো শোধরানো অসম্ভব। শোধরানো যে অসম্ভব– সেটা তো বোঝাই যাচ্ছে। সংস্কারের উদ্যোগ তো কম নেওয়া হয়নি; হামেশাই নেওয়া হচ্ছে। একের পর এক কমিটি, কমিশন আসছে-যাচ্ছে; সুচিন্তিত নানা ধরনের সুপারিশ পাওয়া যাচ্ছে, আরও পাওয়া যাবে; থামবে না। কিন্তু যতই যা করা হোক, শিক্ষাব্যবস্থাটা মোটেই সবল হচ্ছে না, উল্টো ক্রমাগত দুর্বল হচ্ছে। এর কারণ, দীক্ষাগুরুর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। অব্যাহত রয়েছে বললে সবটা বলা হবে না; তৎপরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রবল হচ্ছে। আর ওই প্রবলতাই হচ্ছে মূল কারণ, যে জন্য শিক্ষাব্যবস্থাটা বিপদগ্রস্ত হতে হতে এখন প্রায় ধ্বংসের প্রান্তে এসে পৌঁছেছে।