প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে
কয়েক মাস ধরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কম। এ বাস্তবতায় এ খাতের সুরক্ষায় আগামী বাজেটে কিছু নীতি সহায়তা চায় তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সমকালের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন সংগঠনের সভাপতি ফারুক হাসান।
পোশাক খাতের জন্য আগামী বাজেটে আপনাদের এক নম্বর দাবি কী?
ফারুক হাসান: আমাদের মূল দাবি হলো, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা। অর্থাৎ বর্তমান উৎসে করের অর্ধেক হারে নির্ধারণ করে, তা আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত বহাল রাখা। তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন এবং রপ্তানি বাণিজ্য যে ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণে কিছুটা হলেও সহায়ক হতে পারে উৎসে কর কর্তনের হার সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা।
কেন উৎসে কর কর্তনের ইস্যুটিকে আপনারা অগ্রাধিকার মনে করছেন? আর পোশাক খাতের বর্তমান সংকট ঠিক কোথায়?
ফারুক হাসান: গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের প্রতিনিধি বায়ার্স ফোরামের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে আমাদের। সেখানে আমরা সামনের দিনগুলোতে বৈশ্বিক পোশাকের বাজার কেমন হবে– তা জানতে চেয়েছি। তারা আশাব্যঞ্জক কিছু বলেননি। ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে খুচরা বিক্রয়ে মন্দাভাব, ওয়্যার হাউসগুলোতে অবিক্রীত পোশাকের স্তূপ সরবরাহ চেইনের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ছয় মাসে মোট রপ্তানি আয়ে কিছুটা প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে বটে, তবে পরিমাণের বিচারে রপ্তানি কমেছে। এদিকে আয়ের দিক থেকেও গত মার্চ মাসে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১ শতাংশের বেশি। এপ্রিলে কমেছে ১৫ শতাংশ। আগামী মাসগুলোতেও ভালো হওয়ার আশা নেই। মূলত বৈশ্বিক বৈরী পরিস্থিতির সঙ্গে দেশে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণেই এ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। এ সংকটকালে শিল্প টিকিয়ে রাখতে উৎপাদন খরচ কমানোর সব পথ বেছে নিতে হবে। প্রণোদনা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় শক্তি জোগাতে হবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী উৎসে কর সহনীয় মাত্রায় কর্তন হতে পারে এ মুহূর্তের সবচেয়ে ভালো উপায়।
গত অর্থবছরের চেয়ে চলতি অর্থবছর দ্বিগুণ হারে উৎসে কর কর্তনের প্রভাব পড়েছে?
ফারুক হাসান: বিশ্ববাজারে কাঁচামালের মূল্য, জ্বালানির মূল্য, পরিবহন খরচসহ সব খরচ বৃদ্ধির কারণে গত বছর থেকেই উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে উদ্যোক্তারা পুঁজির সংকটে পড়েছেন। এ বাস্তবতায় আগের বছরগুলোর চেয়ে উৎসে করহার দ্বিগুণ হলে পরিস্থিতি কেমন হতে পারে– তা সহজেই অনুমান করা যায়। এর সঙ্গে তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির চাপ তো রয়েছেই। রপ্তানি সক্ষমতা ধরে রাখতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে দর প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে।
উৎসে করে ছাড় পাওয়া গেলে পোশাক খাত কি বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে?
ফারুক হাসান: উৎসে কর কমানো হলে পোশাক খাত বর্তমান সংকট কাটিয়ে উঠতে অনেকটা সক্ষম হবে। করোনাকালীন সংকটে নেওয়া ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। এ ছাড়া পোশাক খাতে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সহনীয় উৎসে করহার বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।