অহিংসা ও উদারতার দর্শন
আড়াই হাজার বছরেরও আগে এশিয়া মহাদেশের প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলের একটি রাজা শাসিত ঐতিহ্যবাহী বংশে এই দিনে জন্ম নেওয়া একটি শিশু পরবর্তী সময়ে কী করে তাঁর অর্জিত জ্ঞান, গভীর অন্তর্দৃষ্টি, কঠোর তপস্যা, সহৃদয় বিবেচনা, অপার করুণাঘন প্রেম আর মৈত্রী দিয়ে সে সময়ের প্রচলিত ঈশ্বরবাদী ধর্মচেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে বিশ্বজগতে একটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এবং নতুন ভাবধারার মতবাদের সূচনা করেন, তা সত্যিই আশ্চর্যজনক। মহাকালের পথপরিক্রমায় আজও বিশ্বের সব জাতি-গোষ্ঠীর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এই দিনটি মহাসমারোহে এবং ভাবগাম্ভীর্যে উদযাপন করে। এই পূর্ণিমা তিথির শুভদিনে বৌদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক সিদ্ধার্থ গৌতম, যিনি পরবর্তী সময়ে ‘বুদ্ধ’ নামে পরিচিত হয়েছিলেন– জন্মলাভ, বুদ্ধত্ব বা জ্ঞানালোকপ্রাপ্ত এবং নির্বাণপ্রাপ্ত বা ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন বলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে দিবসটি উদযাপন করেন।
বুদ্ধ তাঁর প্রদর্শিত পথ এবং মুখনিঃসৃত বাণীর মধ্যে সবার প্রতি অহিংসা পোষণ, মৈত্রী লালন, সব জীবের সুখ-শান্তি কামনা ও দয়া প্রদর্শনের বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। মানুষকে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতে পরামর্শ দিয়েছেন। কেননা, তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন– কোনো কিছুতেই অতি চরম পন্থা অবলম্বন বা অতি নিষ্ক্রিয় ভাব গ্রহণ যথার্থ নয়। তিনিই প্রথম উচ্চারণ করেছিলেন– হিংসা দিয়ে হিংসাকে জয় করা যায় না; বরং হিংসাকে জয় করতে হলে মৈত্রীই সর্বাগ্রে আবশ্যক। ঘৃণা ঘৃণারই জন্ম দেয়; ভালোবাসা নয়। আজ ঠিক এই সময়ে এক দল মানুষ আরেক দল মানুষের ওপর আধিপত্য বিস্তার, খবরদারি, অবদমিত রাখা এবং তাদের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে কত ধরন ও শ্রেণির সমস্যা সৃষ্টি করেছে, তা তো সবারই জানা।
- ট্যাগ:
- মতামত
- বুদ্ধ পূর্ণিমা