চিম্বুক পাহাড়ে পানির কষ্ট
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উপরে বান্দরবানের চিম্বুক পাহাড়ে এমনিতেই শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট থাকে; কিন্তু মার্চ-মে এই তিন মাস যেন পানির জন্য ‘নীরব হাহাকার’ তৈরি হয় ম্রো জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত প্রায় ১০০ পাড়ায়।
এই সময়ে নারীরা মধ্যরাত থেকে পালা করে ভোর পর্যন্ত দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে কোনোমতে পরিবারের খাবারের পানি সংগ্রহ করে আনেন। ঝিরি ও ছড়ায় পাথরের ফাঁকে অল্প অল্প করে পানি আসে।
পানির উৎস হাতেগোনা থাকায় পাড়ার অনেক মানুষ একসঙ্গে পানি আনতে পারেন না। এভাবে চললে একসময় বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা করেছেন পাড়াবাসী।
বন ও প্রকৃতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়েও বৃষ্টির পরিমাণ প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। অবাধে ধ্বংস করা হচ্ছে বন। এসব কারণে পাহাড়ের পানির প্রাকৃতিক জলাধার ও উৎসমুখ দিনে দিনে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে পাহাড়ি নৃ-গোষ্ঠীর জনস্বাস্থ্যের উপর।
বান্দরবান শহর থেকে রুমা-থানচি সড়কের পাশে চিম্বুক পাহাড়ের ম্রোলং পাড়া থেকে জীবননগর পাহাড় এলাকা পর্যন্ত প্রায় ১০০ ম্রো পাড়া রয়েছে। এসব পাড়ায় ১২ থেকে ১৩ হাজার মানুষের বসবাস। বেশিরভাগ পাড়ার অবস্থান পাহাড়ে চূঁড়ায়। কিছু পাড়া রয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে।
বান্দরবান মৃত্তিকা সম্পদ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাহাড়ে পানির প্রধান উৎস বৃষ্টি। পাহাড়ে একসময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হত। বছরে ২৫০০ মিলিমিটার থেকে ৩০০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হত। সে জায়গায় গত বর্ষা মৌসুমে মাত্র ১৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঝিরি-ঝর্ণায় আগে যে পরিমাণ পানি থাকার কথা এখন সে পরিমাণে থাকে না।“
মধ্যরাত থেকে ‘পানিযুদ্ধ’
সম্প্রতি চিম্বুক পাহাড়ে ম্রোলং পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার ২৭টি পরিবারের জন্য পার্বত্য চট্ট্রগাম উন্নয়ন বোর্ডের করে দেওয়া একটা জিএফএস বা গ্র্যাভিটি ফ্লো সিস্টেম (পাহাড়ি ঝর্ণা ও ছড়ায় বাঁধ দেওয়ার পর পাইপের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়। পরে ট্যাংকে জমিয়ে পরিশোধন করে পানি সরবরাহ করার পদ্ধতি) রয়েছে। সেখানে ট্যাপ দিয়ে খুব অল্প করে পানি পড়ছে। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পরও এক কলসি পানি ভরবে না।
জিএফএস ট্যাংকের পাশে কয়েকটি খালি বোতল নিয়ে পানি ভরার চেষ্টা করছিলেন চামলে ম্রো।
পানি সংকটের কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, যে ছড়ার মুখ থেকে বাঁধ দিয়ে পাইপের মাধ্যমে পানি নিয়ে আসা হয়েছে সে পানির উৎস শুকিয়ে গেছে। খুব অল্প করে পানি আসে। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে খুব অল্প হলেও খাওয়ার জন্য বোতলে ভরে নিতে আসে।
পাড়া থেকে দূরে দুইদিকে দুইটা ঝিরি আছে। শুষ্ক মৌসুমে এই ঝিরি দুটিই ২৭টি পরিবারের একমাত্র পানি সংগ্রহের উৎস। তবে দুই ঝিরির অবস্থাও করুণ। নামমাত্র পানি পাওয়া যায়।