এ কী ঘটছে হজযাত্রীদের নিয়ে
সাধারণত যাদের সামর্থ্য আছে, তারাই হজ করতে যান। বাংলাদেশের মতো দেশে অল্প কিছু মানুষকে বাদ দিলে এমন সামর্থ্যেরও একটা সীমাবদ্ধতা আছে।
বাংলাদেশের বাস্তবতা থেকে দেখা যায়, মানুষ কয়েক বছর ধরে বা সারা জীবন টাকা জমিয়ে শেষ বয়সে হজ করতে যান। অনেক সময় সন্তানরা মা-বাবাকে হজ করতে পাঠান বা নিজেরাও সঙ্গে যান। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে হজ করতে যাওয়া প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বেশি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশ থেকে তরুণরাও হজ করতে যান, কিন্তু বাংলাদেশ থেকে তুলনামূলকভাবে এমন হজযাত্রীর সংখ্যা কম এবং মূলত প্রবীণরাই হজ করতে যান।
টাকা জমিয়ে যারা হজ পালন করেন, তাদের একটা বড় অংশ এবার যেতে পারছেন না। এ বছর ১ লাখ ২৭ হাজার বাংলাদেশি হজ করার সুযোগ পাবেন। কিন্তু ৩ বার সময় বৃদ্ধি করেও কোটা পূরণ হচ্ছে না। ১৩ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৮৬ হাজার ১২৮ জন আগ্রহী হজযাত্রী। যদিও হওয়ার কথা এর উল্টো। কোটার তুলনায় হজে যাওয়ার জন্য আগ্রহী মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি।
তাহলে সমস্যাটা কোথায়? সমস্যা হজ প্যাকেজে। গত বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় সর্বনিম্ন হজ প্যাকেজ ছিল ৪ লাখ ৬২ হাজার টাকা। এ বছর হজ প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। এর সঙ্গে কোরবানি, খাবার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করার পর হজ প্যাকেজের প্রকৃত খরচ দাঁড়াবে ৮ লাখ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা।
গত বছরের চেয়ে খরচ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী?
ডলারের মূল্য বৃদ্ধি একটি কারণ, তবে একমাত্র কারণ নয়। অন্যতম প্রধান কারণ এক ধরনের একক আধিপত্যগত বাণিজ্যিক মানসিকতা।
সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী মোট হজযাত্রীর অর্ধেক পরিবহন করবে বাংলাদেশ বিমান ও বাকি অর্ধেক পরিবহন করবে সৌদি আরবের ২টি এয়ারলাইনস সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস।
বাংলাদেশ ইচ্ছে করলে দেশের অন্য কোনো এয়ারলাইনসকে সম্পৃক্ত করতে পারে। তবে এমিরেটস, কাতার বা অন্য কোনো বিদেশি এয়ারলাইনস হজযাত্রী পরিবহন করতে পারবে না।
বিমান, সৌদিয়া ও ফ্লাইনাস তাদের ভাড়া গত বছরের তুলনায় বাড়িয়েছে ৩০ শতাংশ এবং স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বাড়িয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।
স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন এয়ারলাইনসে ঢাকা থেকে সৌদি আরবের যাওয়া ও আসার ভাড়া ৭০-৮০ হাজার টাকা। কিন্তু হজযাত্রীদের থেকে এ বছর বিমান ভাড়া নিচ্ছে প্রায় ২ লাখ টাকা।
চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ বিমান পরিবহন করবে ৬৩ হাজার ৫০০ হজযাত্রী। যাত্রী প্রতি ১ লাখ টাকা বেশি নেওয়ায় বিমান বাড়তি আয় করবে ৬৩৫ কোটি টাকা।
এই ভাড়া বৃদ্ধির কারণ হিসেবে বিমান যে দাবি করছে, তা অদ্ভুত। তারা বলছে, যে উড়োজাহাজ হজযাত্রী নিয়ে সৌদি আরবে যাবে, ফেরার সময় প্রায় খালি ফিরবে। তাই খালি ফ্লাইট নিয়ে ফেরার লোকসানটা হজযাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে বিমান।
- ট্যাগ:
- মতামত
- হজযাত্রা
- খরচ বৃদ্ধি