প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও চাকরি হবে সমপদে
সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও বিলুপ্তির কারণে উদ্বৃত্ত হয়ে পড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্তীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য নতুন একটি আইনের খসড়া করা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সর্বশেষ পদের সমপদে এবং একই বেতন স্কেলে উদ্বৃত্ত কর্মচারীকে আত্তীকরণ করা যাবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ‘সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী আত্তীকরণ আইন-২০২৩’-এর খসড়ায় এই বিধান রাখা হয়েছে। যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা খসড়াটি শিগগির মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হবে। সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৪ লাখ ২৬ হাজার ৭৬৮ জন। তাঁদেরসহ জনবল কাঠামো অনুযায়ী দেশে মোট সরকারি পদের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫২টি। অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর জন্য ‘সরকারি কর্মচারী আইন’-এর অধীনে আত্তীকরণ বিধিমালা রয়েছে।
সূত্র বলছে, নতুন আইন কার্যকর হলে বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আত্তীকরণের সুযোগ তৈরি হবে।
জানতে চাইলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রউফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, আইন না থাকায় বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আত্তীকরণ করা যাচ্ছে না। প্রায় এক বছর ধরে আইনের খসড়া যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদনের জন্য শিগগির খসড়াটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে বিল আকারে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে।
প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বশাসিত সংস্থা ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীর পদ প্রশাসনিক পুনর্গঠন, জনবল যৌক্তিকীকরণ বা অন্য কোনো কারণে বিলুপ্ত হলে ওই কর্মচারীকে উদ্বৃত্ত ঘোষণা করতে পারবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, স্বশাসিত সংস্থা বা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। ঘোষণার এক মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আত্তীকরণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কোনো পরীক্ষা ছাড়াই উদ্বৃত্ত হওয়ার আগের স্কেলের সমস্কেলভুক্ত পদে আত্তীকরণ করতে হবে। এ জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতি লাগবে। যোগ্য ও অভিজ্ঞ কর্মচারীরা অগ্রাধিকার পাবেন। যেকোনো মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে আত্তীকরণের ক্ষমতা দিতে পারবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আত্তীকৃত পদে যোগদানের আগে তাঁরা যে হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে সর্বশেষ বেতনভাতা গ্রহণ করেছেন, সেই অফিস থেকেই বেতন, ভাতা এবং অবসরসুবিধাদি তুলবেন। এ জন্য সুপারনিউমারারি পদ সৃজন করা হবে। আত্তীকৃত পদের জ্যেষ্ঠতা, বেতন, পেনশন এবং আনুতোষিকের জন্য তাঁর আগের চাকরির সম্পূর্ণ সময়কাল গণনা করা হবে। যে প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণ করা হবে, সেই প্রতিষ্ঠানের বিধি-প্রবিধি অনুযায়ী বেতন, ভাতা ও অবসরসুবিধা পাবেন। যে কর্মচারী যে মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত, সেই মন্ত্রণালয় তাঁদের উদ্বৃত্ত করবে। উদ্বৃত্তকরণের তারিখ থেকে আত্তীকরণের আগপর্যন্ত তাঁদের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন লাগবে না।
খসড়া অনুযায়ী, সরকারের ৫০ শতাংশের অধিক অর্থায়নে পরিচালিত কোম্পানি, ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা শিল্প-বাণিজ্য সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরাও আত্তীকরণের সুবিধা পাবেন। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরিকালের ৫০ শতাংশ আত্তীকৃত সরকারি পদের জ্যেষ্ঠতার জন্য গণনা করা হবে। তবে একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান থেকে অপর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে আত্তীকরণের ক্ষেত্রে পূর্ব পদের সম্পূর্ণ চাকরিকাল আত্তীকৃত পদের জ্যেষ্ঠতা, বেতন, ছুটি, পেনশন এবং আনুতোষিকের জন্য গণনা করা হবে। ২৫ বছর চাকরি করার পর কোনো কর্মচারী উদ্বৃত্ত হলে এবং তিনি পূর্ণ অবসরসুবিধা গ্রহণ করলে পুনরায় সরকারি কোনো কার্যালয়ে আত্তীকরণের জন্য বিবেচিত হবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকমিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের পরামর্শের প্রয়োজন হবে না।