রীতিমতো রহস্যজনক

সমকাল সম্পাদকীয় প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২৩, ০২:০০

বৃহস্পতিবার সকালে সংঘটিত ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনাটি নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক; তবে অন্তত শুক্রবার অবধি প্রকাশিত ঘটনার চিত্র দেখিয়া উহাকে রীতিমতো রহস্যজনক বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না। সমকালসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, বেসরকারি নিরাপত্তা কোম্পানি মানি প্লান্ট লিঙ্ক সিকিউরিটিজের একটি গাড়িতে উক্ত টাকা ঢাকা হইতে সাভার ইপিজেডে ডাচ্-বাংলার বুথে লইয়া যাইবার কালে উত্তরা এলাকায় একটি মাইক্রোবাস দিয়া ব্যারিকেড সৃষ্টি করিয়া ১০-১২ জন ব্যক্তি টাকাভর্তি চারটি ট্রাঙ্ক ছিনাইয়া লয়।


রাজধানীর বুকে একেবারে প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত এহেন অপরাধমূলক ঘটনা নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা ঝুঁকিই তুলিয়া ধরে। যদিও একই দিন সন্ধ্যার মধ্যে পুলিশি অভিযানে ছিনতাইকৃত টাকার একটা অংশ উদ্ধার প্রশংসনীয়; বাস্তবতা হইল অপরাধীদের কেহই অন্তত এই সম্পাদকীয় লিখার সময় পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয় নাই, বাকি টাকা উদ্ধার তো দূর স্থান।


আরও উদ্বেগজনক বিষয় হইল, ছিনতাইকারীদের অন্তত একজন নিজেকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা তথা ডিবির সদস্য বলিয়া দাবি করিয়াছে; যাহার অর্থ হইল, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ছিনতাই-ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনের ঘটনা দীর্ঘদিন যাবৎ চলিয়া আসিলেও উহা বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ অদ্যাবধি গৃহীত হয় নাই। বলা বাহুল্য, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ভাবমূর্তির জন্য এই অবস্থা ক্ষতিকর হইলেও– দুঃখজনকভাবে– উহা পরিবর্তনের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ পরিলক্ষিত হইতেছে না।


এইদিকে, প্রতিবেদনমতে– ছিনতাইকারীরা নিরস্ত্র হইলেও টাকা বহনকারী গাড়িতে অবস্থানরত ছয়জন নিরাপত্তাকর্মী উহাদের বিরুদ্ধে সামান্যতম প্রতিরোধ গড়িয়া তোলেন নাই। উপরন্তু, বড় অঙ্কের টাকা পরিবহনকালে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীদের অস্ত্র বহনের নিয়ম থাকার পরও মানি প্লান্ট সিকিউরিটিজের উক্ত কর্মীরা ছিলেন নিরস্ত্র। বিষয়গুলি রহস্যজনকই বটে। আমাদের এমনটা মনে করিবার আরেকটা কারণ হইল, সুযোগ থাকিবার পরও উক্ত কোম্পানি ঐ বিপুল পরিমাণ টাকা বহন করিবার কালে স্থানীয় পুলিশেরও সহযোগিতা প্রার্থনা করে নাই; যাহা একটা পেশাদার কোম্পানির বৈশিষ্ট্য হইতে পারে না।


উক্ত ছিনতাইয়ের ঘটনায় রহস্য শুধু টাকা বহনকারী কোম্পানির লোকেরাই জন্ম দেননি, খোদ পুলিশও উহাতে অবদান রাখিয়াছে বৈকি। প্রথমত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডিবি লুণ্ঠিত প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের কথা বলিলেও পরে তুরাগ থানা পুলিশ জানায়, উদ্ধার করা ট্রাঙ্কে পাওয়া গিয়াছে প্রায় চার লক্ষ টাকা। যদিও উদ্ধারকৃত টাকার অঙ্ক লইয়া এহেন দ্বিবিধ বক্তব্যের ব্যাখ্যাস্বরূপ বলা হইয়াছে, বৃহস্পতিবারের বক্তব্যটা ছিল অনুমানভিত্তিক এবং উদ্ধারকৃত তিনটা ট্রাঙ্কের মধ্যে একটা কাটিয়া ছিনতাইকারীরা পূর্বেই টাকা সরাইয়া লইয়াছিল; তদস্ত্ত্বেও ইহা অস্বীকার যাইবে না যে, এই ধরনের বক্তব্য অন্তত পুলিশের পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করিয়াছে। অধিকন্তু, অতীতে সংঘটিত বহু নজির তুলিয়া ধরা যায় যথায় ছিনতাইকৃত টাকা বা চোরাই সামগ্রী উদ্ধার করিতে যাইয়া পুলিশের কোনো কোনো দল উদ্ধারকৃত টাকা বা সামগ্রীর একটা অংশ আত্মসাৎ করিয়াছে। এইদিকে, শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ছিনতাইকালে ব্যবহার করা হয় ট্রাফিক পুলিশের এক সার্জেন্টের ভাইয়ের মালিকানাধীন মাইক্রোবাস, যাহার তত্ত্বাবধান করিতেন উক্ত পুলিশ সার্জেন্ট। যদিও পুলিশের পক্ষ হইতে দাবি করা হইয়াছে, উক্ত মাইক্রোবাসটি গাড়িচালকের নিকট হইতে ছিনতাইকারীরা ভাড়ার নাম করিয়া ছিনাইয়া লইয়াছিল, বিষয়টা এতটা সরল নাও হইতে পারে।


আমরা মনে করি, উদ্বেগজনক ও রহস্যজনক ছিনতাইকাণ্ডের সহিত জড়িত সকল অপরাধীকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় অবশ্যই আনিতে হইবে; কারণ এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঠেকাইতে হইলে উক্ত ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। তবে একই সঙ্গে, ঠিক একই কারণে উপর্যুক্ত রহস্যগুলিরও সুরাহা করিতে হইবে; কারণ উহা ব্যতিরেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা অটুট রাখা সম্ভবপর নহে; অপরাধ দমনে যাহার গুরুত্ব কম নহে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও