
স্বাধীনতা জাদুঘর: পাতালে গৌরবের স্মারক
বন্ধুদের নিয়ে এসেছিলেন লালবাগের রহমতউল্লাহ ভয়েজ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শেখ ইমন আহমেদ। ঘুরে ঘুরে দেখছেন স্বাধীনতা জাদুঘরটি। এখানকার অনেক কিছুই নজর কেড়েছে তার, মনোযোগ দিয়ে দেখছেন সেসব।
স্বাধীনতার গৌরবময় সেই ইতিহাসের অনেক কিছু নতুন করে জানতে পেরে উচ্ছ্বসিত এ কিশোর বলেন, পাঠ্যবইয়ের বাইরে এভাবে ইতিহাসকে জানলে বেশি মনে থাকবে। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক ইতিহাসই জানি না। নতুন অনেক কিছু জানতে পারলাম।
নারায়ণগঞ্জের আই. ই. টি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী মো. আলিফ খানের মধ্যেও অন্য রকম অনুভূতি তৈরি করেছে ভূগর্ভস্থ এ জাদুঘর। বিশেষ করে মাঝে অবস্থিত রঙিন ফোয়ারা বিশেষ তাৎপর্য্য হয়ে দেখা দিয়েছে তার কাছে।
তিনি বলেন, “জাদুঘরের ফোয়ারাটা আমার খুব ভালো লেগেছে। এখানে একটা ভয়ংকর আওয়াজ শুনে আমি শিহরিত হয়ে উঠেছি। শুনেছি এটা ৩০ লক্ষ শহীদ, দুই লক্ষ মা বোনের আর্তনাদ। ২৩ বছরের শোষণ নিপীড়নের আর্তনাদ এই আওয়াজ।”
ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এ স্বাধীনতা জাদুঘর আর দূর থেকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা কাচের তৈরি ১৫০ ফুট উচ্চতার স্বাধীনতা স্তম্ভ এসব কিশোরদের মত শিকড় অন্বেষী অনেককেই টানছে। এ স্তম্ভের তিন দিক জলাধার ঘেরা। আরেক পাশে উঁচু বেদির পাতালে ধারণ করে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসের স্মারক স্বাধীনতা জাদুঘর।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই তার ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। এখানেই ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দুইদিন পর বঙ্গবন্ধু ঢাকায় যে মহাসমাবেশ করেন, সেটিও হয়েছিল এই প্রাঙ্গণেই।
নতুন প্রজন্মের কাছে সেই ইতিহাসকে জাগ্রত রাখতে ২০১৫ সালের ২৫ মার্চ যাত্রা শুরু করে দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ এ স্বাধীনতা জাদুঘর।
মুক্তিযুদ্ধ আর বাঙালির ইতিহাসের সন্ধান
জাদুঘরের ঢুকতেই চোখে পড়বে টেরাকোটা ম্যুরালে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার বিভিন্ন প্রামাণ্য মুহূর্ত খচিত দেয়াল। ভেতরে প্রবেশের সময় রঙিন কাচের ভেতর থেকে আসা হালকা সবুজ আলো দেখে মনে হবে যেন কোনো গহীন সুড়ঙ্গপথ।
প্রবেশপথে টিকেট কাউন্টার। জাদুঘরটিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের থেকে প্রবেশমূল্য ২০ টাকা, ১২ বছরের নিচে শিশুদের থেকে ১০ টাকা, বিদেশিদের থেকে ৫০০ টাকা ও সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের থেকে ৩০০ টাকা নেওয়া হয়।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- স্বাধীনতা জাদুঘর