স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায়?

ঢাকা পোষ্ট কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী প্রকাশিত: ০১ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৫

স্বাধীনতা শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়। রাষ্ট্রের স্বাধীনতার সাথে সাথে চিন্তার স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং সর্বোপরি ব্যক্তির স্বাধীনতা অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় তার 'স্বাধীনতা' কবিতায় বলেছেন—


“স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়?
দাসত্ব-শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।
কোটিকল্প দাস থাকা নরকের প্রায় হে,
নরকের প্রায়!
দিনেকের স্বাধীনতা, স্বর্গসুখ-তায় হে,
স্বর্গসুখ তায়!
................................................
সার্থক জীবন আর বাহুবল তার হে,
বাহুবল তার।
আত্মনাশে যেই করে দেশের উদ্ধার হে,
দেশের উদ্ধার।।
................................................
অতএব রণভূমে চল ত্বরা যাই হে,
চল ত্বরা যাই।
দেশহিতে মরে যেই তুল্য তার নাই হে,
তুল্য তার নাই।।”


কবি রঙ্গলাল বন্দোপাধ্যায় তার 'স্বাধীনতা' কবিতায় সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, স্বাধীনতা হীনতায় কেউ বাঁচতে চায় না। জগতের কেউ পরাধীন হয়ে কেউ বাঁচতে চায় না। এমনকি যে পথের ভিখারি সেও পরাধীন হয়ে বাঁচতে চায় না।


রাস্তার একজন পাগলও পরাধীন হয়ে থাকতে চায় না; তাই সে তার মতো করে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করে। সেই চলাফেরা স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক দুটোই হতে পারে। অন্যের দৃষ্টিতে অস্বাভাবিক হলে তাকে পাগলামি বলে।


একটা শিশুও পরাধীন থাকতে চায় না, সে কান্নাকাটি করে হলেও সাধ্যমতো প্রতিবাদ করে তার স্বাধীন ইচ্ছা পূরণ করে। কোটিকল্প দাস থেকে হুজুরের মজুর হয়ে বিভিন্ন উপাদেয় ভোগ্যবস্তু হয়তো ভোগ করা যায়। কিন্তু যদি সে ব্যক্তির জীবনে স্বাধীনতা না থাকে, তবে দিনশেষে তার জীবনের কোনো মূল্যই থাকে না।


আমরা অনেকেই সঠিক সময়ে বুঝতে পারি না যে, আমরা হুজুরের মজুর হয়ে বহুকাল বেঁচে থাকব নাকি মজুরের হুজুর হয়ে ক্ষণকাল বেঁচে থাকব। সিদ্ধান্ত আমাদের।


আমাদের যদি কোনো ব্যক্তিস্বতন্ত্রতা না থাকে, চিন্তার স্বাধীনতা না থাকে; তবে কখনোই তার মধ্যে অন্তর্নিহিত সুকুমার বৃত্তিগুলোর জাগরণ ঘটবে না। তাই পরাধীন অবস্থায় মানুষ যা চিন্তা করে, চিন্তাগুলো খুব একটা ফলপ্রসূ হয় না।


পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, পরাধীন অবস্থায় কোনো জাতির সাহিত্যচর্চার মধ্যে সুস্পষ্টভাবে পরাধীনতার প্রভাব দেখা যায়। এর বড় উদাহরণ মধ্যযুগীয় বাংলা কাব্যগুলো।


মধ্যযুগে এদেশীয় সাহিত্য পরিবর্তিত হয়ে সাহিত্যে অত্যন্ত অলৌকিকতার আমদানি করা হয়। মানুষ যখন সম্মুখের ভয়ংকর শত্রুদের জয় করতে পারে না; তখন সে অলৌকিকতার আশ্রয় নিয়ে শত্রুকে পরাজিত করতে চায়। এই ঘটনাই ঘটেছিল বাংলায়। সেই সময়ের সাহিত্যে অসুর, দস্যু আর কেউ নয়, তারা হলেন বৈদেশিক সাম্রাজ্যবাদীরা। সেজন্য মধ্যযুগের মঙ্গলকাব্যগুলোয় আমরা সেই অলৌকিকতার প্রচণ্ড ব্যবহার দেখি।


সাধারণ মানুষ যখন দেখলেন, শত্রুদের সাথে মুখোমুখি সম্যক লড়াই করা অসম্ভব। তখনই তারা চিন্তা করলেন যেকোনো দেবতা এসে আমার কাছের মানুষ হয়ে, আমার ঘরের মানুষ হয়ে, আমার আপনজন হয়ে দিনশেষে আমাকে রক্ষা করবে।


যিনি নিঃশেষে নিজের জীবন দান করে আপন বাহুবলে দেশের জন্য আত্মাহুতি দেন তিনি অক্ষয় স্বর্গ লাভ করেন। দেশের জন্য যারা প্রাণ বলিদান করেন, জগতে এমন সৌভাগ্য কম মানুষের জীবনেই ঘটে। তাদের মৃত্যু নেই, ক্ষয় নেই।


মৃত্যু হলেও তারা জগতে অমর হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার 'সুপ্রভাত' কবিতায় বলেছেন—


“উদয়ের পথে শুনি কার বাণী,
'ভয় নাই, ওরে ভয় নাই।
নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।”


বাংলাদেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের গৌরবদীপ্ত সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করেছে। অথচ দুঃখজনকভাবে আমরা দেখছি, আমাদের সংস্কৃতির অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে দেশে বিদেশে ষড়যন্ত্রের জাল বিছানো হচ্ছে।


যার নির্দেশনায় এই দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসেই ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে।


কুষ্টিয়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার রাতের আঁধারে ওই ভাস্কর্যের ডান হাত, পুরো মুখমন্ডল ও বাঁ হাতের অংশ বিশেষ ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। (যুগান্তর, ০৫ ডিসেম্বর ২০২০)


জাতির জন্যে এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে? একথা অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশের আনাচে-কানাচে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জুড়ে আজও পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা গিজগিজ করছে। এরা প্যাঁচার মতো সূর্যের আলোকে সহ্য করতে পারে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও