পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৪ বছর: চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি কোনো মামলার
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। সকাল ৯টায় রাজধানীর পিলখানায় দরবার হলে শুরু হয় বার্ষিক দরবার। সারা দেশ থেকে আসা বিডিআর জওয়ান, জেসিও, এনসিওসহ দুই হাজার ৫৬০ জন সদস্যে তখন পরিপূর্ণ দরবার হল। দরবার মঞ্চে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
দরবারে বিডিআর মহাপরিচালকের বক্তব্য চলাকালে সকাল ৯টা ২৬ মিনিটে মঞ্চের বাঁ দিকের পেছন থেকে সিপাহি মইন ও সিপাহি কাজল অতর্কিত মঞ্চে প্রবেশ করেন। মইন ছিলেন সশস্ত্র। কাজল পেছনে থাকেন আর মইন মঞ্চে উঠে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের দিকে অস্ত্র তাক করেন।
মহাপরিচালক শাকিল আহমেদ সবাইকে বারবার শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানান এবং প্রত্যেক কর্মকর্তাকে নিজ নিজ ইউনিট সামাল দিতে বলেন। তখনই সিপাহিদের মধ্য থেকে ‘জাগো’ স্লোগান আসে। এরপরই সিপাহি সেলিম রেজার নেতৃত্বে একটি দল সশস্ত্র অবস্থায় দরবার হলে ঢুকে পড়লে পুরো পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
সেদিন কিছু বিপথগামী সদস্য দাবি আদায়ের নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায়। অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের পাশাপাশি তৎকালীন মহাপরিচালকসহ ৫৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিপথগামী বিদ্রোহীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু ও নারীরাও। তারা নারী ও শিশুসহ ১৭ জন বেসামরিক নাগরিককেও নির্মমভাবে হত্যা করে।
বহুল আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় (পিলখানা হত্যা মামলা) ১৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় মামলা। দীর্ঘ বিচার ও রায় শেষে ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি পিলখানা হত্যা মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া কোনো মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি। নিম্ন আদালত থেকে হত্যা মামলার রায় উচ্চ আদালত হয়ে এখন আটকে আছে আপিল বিভাগে।