মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে উদ্ভাবনের চ্যালেঞ্জ নিতে হবে এনজিওগুলোর
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান ব্র্যাকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি একই সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান। তিনি সার্ক পভার্টি কমিশনেরও সদস্য ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির গ্র্যাজুয়েট হোসেন জিল্লুর রহমান পিএইচডি করেছেন যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে। ১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে তাঁর জন্ম।
ব্র্যাকের ৫০ বছর পূর্তির শেষ অনুষ্ঠান হচ্ছে 'হোপ ফেস্টিভ্যাল'। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের এ অনুষ্ঠানের বিশেষত্ব কী? 'হোপ'-এর ব্যাখ্যাই বা কী?
হোসেন জিল্লুর রহমান: গত বছর মার্চে ব্র্যাক তার ৫০ বছর সম্পন্ন করে। বছরব্যাপী নানামুখী আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠান এই হোপ ফেস্টিভ্যাল। ব্র্যাক টিম অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই বছরওয়ারি আয়োজন সাজিয়েছে।
হোপকে যেমন আমরা ভবিষ্যতের আশা অর্থে ব্যবহার করতে পারি, তেমনি একে আরও নানাভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। এটি যেমন ব্র্যাকের কর্মী বাহিনীর জন্য অনুপ্রেরণার উৎসব, তেমনি অন্যরাও এ থেকে উদ্দীপনা নিতে পারেন। আমাদের দেশ নানামুখী চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে। এখানে অর্থনীতি, সুশাসন, রাজনীতি- সব জায়গায় একটি সংকট যেমন স্পষ্ট, তেমনি এর সঙ্গে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ একত্র হয়ে সমস্যা আরও তীব্রতর হচ্ছে। কিন্তু এসব সমস্যা তো আমাদেরই সমাধান করে এগোতে হবে। তাই এর মধ্যেও সমাধানমুখী চিন্তা লালন করা, সফলতা থেকে শিক্ষা নেওয়া, সংকট মোকাবিলায় নিজের মধ্যে প্রেরণা তৈরি করা- সব মিলিয়েই এই হোপ ফেস্টিভ্যাল।
এ ফেস্টিভ্যাল কি কোনো পরিবর্তনের কথা বলছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান: পরিবর্তন একটি নিত্য প্রক্রিয়া। অর্ধশতাধিক বছর ধরে আমরা নানামুখী পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। আগের সমস্যা আর এখনকার চ্যালেঞ্জ এক নয়। পুরোনো ও নতুন চ্যালেঞ্জ সমাধানে নিজের মধ্যে এক ধরনের সংকল্প ও পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করা জরুরি। অন্যদের মধ্যেও এই তাগাদা তৈরি করা জরুরি। সংকট সমাধানে সে জন্য উদ্ভাবনী চিন্তা, সুনির্দিষ্ট কৌশলও এর বাইরে নয়।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ যে স্বপ্ন নিয়ে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এটি তার কতটা কাছাকাছি পৌঁছেছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান: আবেদ ভাইয়ের স্বপ্ন শুধু কয়েকটি গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক হবে না। মানে এমন নয় যে, আমরা ওই পর্যন্ত যাব, এর পর আমাদের পথ শেষ। তাঁর স্বপ্ন ছিল ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের জীবন পরিবর্তন করা। সেই চ্যালেঞ্জ এখনও স্পষ্ট। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীর অধিকারসম্পন্ন সুন্দর সমাজ গড়ার স্বপ্ন তিনি দেখেছেন। তাই প্রশ্নটা হওয়া উচিত- তিনি যেভাবে স্বপ্ন দেখেছেন, সেই মিশনে ব্র্যাক কতটা রয়েছে। এখানে আমার উপলব্ধি- আবেদ ভাইয়ের মিশনে ব্র্যাক পুরোপুরি রয়েছে। সময়ের আলোকে নতুন নতুন কর্মসূচি গ্রহণও তার বাইরে নয়। বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন একটি সংকট। সুপেয় পানির সংকট কোথাও কোথাও বড় সমস্যা। নগর দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর উন্নম্নয়ন- সব ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করছি এবং এগোচ্ছি। সব সমাধান আমরা জেনে গেছি- এমন আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। প্রতিনিয়ত কাজ করে যাওয়া এবং তার কার্যকারিতার পর্যবেক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ।
৫০ বছরে ব্র্যাকের বহুমাত্রিক বিকাশ ঘটেছে। দেশের বাইরেও এর বিস্তৃতি। ব্র্যাক আবার উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করেছে। এটা কতটা জরুরি ছিল?
হোসেন জিল্লুর রহমান: ব্র্যাক উদ্যোক্তা হিসেবেও সফল হিসেবে প্রমাণিত এবং আমি মনে করি, এটি জরুরি ছিল। এর দুটি দিক। প্রথমটি হলো, প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি ব্র্যাককে আরও টেকসই করেছে; আবার ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের টেকসই পরিবর্তনের জন্যও এটি জরুরি ছিল। তা ছাড়া মানুষের কর্মসংস্থানেও এটি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। আড়ংয়ের উদাহরণ নেওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ যেটি ঘটেছে সেটি হলো, গ্রামীণ নারীদের সুযোগ তৈরি। আড়ং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বাজারের সম্পর্ক তৈরি করেছে। আড়ং ডেইরি, সেখানেও একই অবস্থা। ব্র্যাক যেমন নতুন বাজার তৈরি করেছে এবং বাজারের সঙ্গে দরিদ্র মানুষকে সংযুক্ত করেছে; একই সঙ্গে পণ্যসেবার মানও তৈরি করেছে। গুণগত মান বজায় থাকার কারণে বাণিজ্যিকভাবেও ব্র্যাকের অনেক উদ্যোগ সফল হয়েছে।
দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য বেকারত্ব এখন বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে তৈরি ও কর্মসংস্থানে ব্র্যাক কতটা ভূমিকা রাখছে?
হোসেন জিল্লুর রহমান: ব্র্যাক মানবসম্পদ উন্নয়নে বরাবরই ভূমিকা পালন করে আসছে। আগে ব্র্যাক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়া শিশুদের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য সারাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এখন নতুন চ্যালেঞ্জ তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা। এই দক্ষতা শিক্ষায় ব্র্যাকের নানামুখী উদ্যোগ চলমান। নারীদের গাড়ি চালনায় প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ব্র্যাক। তা ছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের কল্যাণেও এর অবদান গুরুত্বপূর্ণ। ব্র্যাক উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করতে গড়ে তুলেছে 'আমরা নতুন নেটওয়ার্ক'। হোপ ফেস্টিভ্যালে ১০ জনকে দেওয়া হবে আমরা নতুন ইয়াং চেঞ্জমেকারস অ্যাওয়ার্ড। এর মাধ্যমে নতুন চিন্তা এবং কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সুযোগ তৈরি হয়েছে।