অর্থনীতির সংকটে জনসভার স্থানের জন্য প্রাণহানি
আপনি যখন লেখাটা পড়ছেন, তার ঠিক ১৩৭ দিন আগের একটি খবরের শিরোনাম ছিল, ‘কার্যালয় ঘেরাও করতে এলে বিএনপিকে চা খাওয়াবেন প্রধানমন্ত্রী’। গত ২৩ জুলাইয়ের সে খবরটিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উদ্ধৃত করা হয়েছিল এভাবে, ‘বাংলামোটরে যে বাধা দেওয়া, সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছি। আসুক না হেঁটে হেঁটে যত দূর আসতে পারে। কোনো আপত্তি নেই। আমি বসাব, চা খাওয়াব। কথা বলতে চাইলে শুনব।’ বিএনপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও তো দূরের কথা নিজেদের কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দিয়েই এখন বিপদে। এখন সেখানে তাদের সমাবেশ করা তো দূরের কথা, দাঁড়াতেও দেওয়া হবে না বলে সরকারিভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও র্যাবের তরফেও বলা হয়েছে, অননুমোদিত কোনো কিছু ঘটতে না দিতে তারা পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারাও বলেছেন পাড়ায়-মহল্লায় তাঁরা রাস্তায় থাকবেন এবং বেশ কয়েকটি সমাবেশেরও আয়োজন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক সংকটের কালে রাজনীতির বদলে জনসভার জায়গা নিয়ে বিবাদ ও আতঙ্ক সৃষ্টির এক নতুন নজির তৈরি হচ্ছে। জনসমাবেশের তিন দিন আগেই দলীয় কার্যালয় ঘিরে তাণ্ডব ও মর্মান্তিক মৃত্যু দেখতে হয়েছে, যা অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়।
পুলিশ বিএনপিকে মাইক ব্যবহার করে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে বলে জানালেও জানা গেল জনসভার স্থান হতে হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং তার জন্য উদ্যান কর্তৃপক্ষের আলাদা অনুমতি লাগবে। জায়গার সিদ্ধান্ত ছাড়াই সমাবেশের অনুমতির অর্থ কী, সেটা বোঝা ভার। জায়গা নিয়ে সরকারের সঙ্গে টানাপোড়েন তৈরি হলে রাজনীতিতে উত্তাপ তৈরি হবে, একটা সম্ভাব্য শক্তি পরীক্ষার লড়াইয়ের জন্য সাজ সাজ রব উঠবে, সেটা কি পুলিশ কর্তাদের জানা ছিল না? অনুমতির জন্য যে ২৬ দফা শর্ত দেওয়া হলো, সেগুলোরই-বা উৎস কী? স্বাধীনতার আগে পাকিস্তানি শাসন কিংবা স্বাধীনতার পর সামরিক-বেসামরিক কোনো আমলেই তো এত শর্তের কথা কেউ শোনেনি।
জনসভার জায়গার কথায় ফেরা যাক। ৩২ বছর আগে জেনারেল এরশাদের সামরিক শাসনের অবসান ঘটাতে সব রাজনৈতিক দল যে জাতীয় রূপরেখা তৈরির করেছিল, তিনটি জোট তা ঢাকায় একযোগে তিনটি আলাদা জনসভায় ঘোষণা করেছিল। ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বরের ওই তিনটি জনসভার স্থান ছিল এক বর্গ কিলোমিটারেরও কম এলাকার মধ্যে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট ১৫ দল বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, বিএনপির নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় জোট ফুলবাড়িয়ায় এবং পাঁচ দল তোপখানায়। ঢাকায় তখন আরও যেসব জায়গায় জনসমাবেশ হতো, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—আউটার স্টেডিয়াম, বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ গেট, দৈনিক বাংলার মোড়, শাপলা চত্বর, নয়াবাজার, নবাবপুর রোড ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। কেন্দ্রীয় ডাকঘরের পাশে একটা কথিত মুক্তমঞ্চও ছিল। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ছোটখাটো সমাবেশ ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার, যেগুলোকে সাধারণত কেউ জনসভা বলত না।